শ্রেয়া চ্যাটার্জি – শুরু হলো গ্রীষ্মের দিন। গোটা ভারতবর্ষ জুড়েই তাপপ্রবাহ চলতে থাকে। কোথাও একটু বেশি, কোথাও একটু কম। বেশি তাপমাত্রার তালিকাতে রয়েছে আমেদাবাদ। আর সেখানেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাফিক পুলিশদের একটু স্বস্তি দিতে ২৩ বছরের এক যুবক সৌরশক্তি সম্পন্ন তাপ শোষণকারী এক অভিনব ছাতা বানিয়ে ফেলেছেন। করোনা ভাইরাসের জন্য ভারতবর্ষজুড়ে লকডাউন চলছে, তাই সাধারণ মানুষ আপাতত ঘরের মধ্যে বসে ফ্যান, এয়ারকন্ডিশন বা কুলারের হাওয়া খেলেও রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাফিক পুলিশ এর যাকে বলে চাঁদি ফেটে যাওয়ার যোগাড়। কেউ রাস্তাঘাটে অযথা বেরোচ্ছে কিনা বা রাস্তাঘাটে বেরিয়ে নিয়ম ভাঙছে কিনা সেটা দেখার জন্য তো ট্রাফিক পুলিশদের রাস্তায় থাকতেই হবে।
যখন আদিব মানসুরি নামে এক ইঞ্জিনিয়ারের মাথায় এই অভিনব কায়দায় ছাতা বানানোর বিষয়টি আসে যখন সে দেখেছিল রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একজন ট্রাফিক পুলিশ অত্যন্ত গরমে বেশ কষ্ট পাচ্ছেন। তারপরে যেমন ভাবা তেমনি কাজ। তবে এই ছাতা শুধুমাত্র যে রোদের হাত থেকে বাঁচাবে তাই নয়, হাওয়াকেও ঠান্ডা করবে এয়ার কুলার এর মাধ্যমে। ছাতাটিতে লাগানো রয়েছে ছোট ফ্যান। সৌরশক্তির মাধ্যমে এটি কাজ করবে। তবে রাত্রিবেলা ফ্যানের হাওয়া খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। একটি ছোট ব্যাটারির মাধ্যমে। এই অসময়ে শহরের প্রত্যেকটা মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক পুলিশরা যেভাবে তাদের কর্তব্য করে চলেছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। গ্রীষ্মের দাবদাহে শুধুমাত্র অসহ্যকর তাই নয় এটি মানুষের প্রাণ নেয়।
তবে লকডাউন বুঝিয়ে দিয়েছে প্রত্যেক মানুষের প্রত্যেকের পাশে দাঁড়ানো উচিত। “একজন ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র হিসেবে আমার এটি কর্তব্য”- এমনটাই জানালেন আবিদ। ছাতা গুলির এক একটির দাম ৩০০০ টাকা। আবিদ জানান, “এই কাজটি করতে আমাকে আমার কলেজ অনেকখানি সাহায্য করেছে অর্থনৈতিকভাবে এবং উপাদান যোগানের ক্ষেত্রেও। গ্রীষ্মকালে আমেদাবাদের প্রচণ্ড গরম পড়ে। শুধুমাত্র ট্রাফিক পুলিশ নয়, যারা ফলের রস বিক্রি করেন, নারকোল বিক্রি করেন, তাছাড়া সবজি বিক্রেতা প্রত্যেকে এই দাবদাহে প্রচণ্ড কষ্ট পান। তাদেরকে দেখে আমি বুঝতে পেরেছিলাম, যে এই ছাতাটি বানানো কতটা প্রয়োজন। অর্থনৈতিক ভাবে কলেজের সাহায্য পেয়ে এবং অধ্যাপকদের নানান রকম সাহায্যে আমি এটি করতে পেরেছি।”
এই ভাবেই যদি সাধারন মানুষের পাশে প্রত্যেকে একেকজন করে এগিয়ে আসেন তাহলে পৃথিবীটা হয়তো একটু অন্যরকম হয়। একজন মানুষের এক একটি পদক্ষেপ যথেষ্ট। শুধু অন্যের ভালো করব এমন মানসিকতা নিয়ে এগোতে হবে। বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়বে বৈ কমবেনা।তাই গরম থেকে বাঁচার জন্য বিকল্প পথ বেছে নিতেই হবে। আর কিভাবে সূর্যের এই অসম্ভব তাকে কাজে লাগানো যায় তাও মাথা থেকে মানুষকেই বার করতে হবে। এবং অভিনব একটি ছাতা বানানোর জন্য আবিদকে কুর্নিশ জানাতে হয়। সেই শুধুমাত্র পড়াশোনা করে চাকরি বাকরি করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইনি তার এতোটুকু চেষ্টায় যাতে অন্যের ও একটু ভালো হয় তেমনটাও সে দেখেছে। সত্যিই এক অসাধারণ মানবিক উদ্যোগ।