শ্রেয়া চ্যাটার্জী : প্রতিদিন ২৫০ জন বস্তিবাসী শিশুকে দিল্লির ফ্লাইওভারের তলায় পড়াশোনা করানো হয়। যা সত্যিই একটি অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন দিল্লির বাসিন্দা সত্যেন্দ্র। এখানে প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত বাচ্চাদের পড়ানো হয় এবং যে যেমনটা পারেন সে তেমনটাই টাকা পয়সা দেন। ছোট শিশুদেরকে কুড়ে ঘরের মধ্যে পড়ানো হয় আর বড়দের ফ্লাইওভারের তলায় ফাঁকা জায়গাতেই ক্লাস করানো হয়। সত্যেন্দ্র অংকের উপর অনার্স করেছে এবং সেই বস্তিতেই থাকে এবং ২৫ বছরের এই যুবক সে দেখল যে তাদের বস্তি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে একটি সরকারি স্কুলে এই বস্তিবাসী ছেলেমেয়েরা পড়তে যায় না। কারণ তাদের মা-বাবারা বেশিরভাগ সময় মাঠে চাষ করতে যায়, তাদের কাছে কোন সময় থাকেনা বাচ্চাদেরকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে আসার মত। যার ফলে তারা বাড়িতেই বসে থাকে। সত্যেন্দ্র বুঝতে পেরেছিল পড়াশুনার কি গুরুত্ব। যখন সে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পরে তার পড়াশোনাটা আর চালিয়ে যেতে পারেনি তখন তার বাবা তাকে বলেছিল যে সে যেন মাঠের কাজে লেগে পড়ে। কিন্তু সত্যেন্দ্র অনেকদিন পরে যখন বুঝতে পারে যে পড়াশোনার গুরুত্ব টা কি যখন সে নাগার্জুন ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে বৌদ্ধ ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করেছিল।
সত্যেন্দ্র এবং তার ছাত্ররা মাঠের মধ্যে প্লাস্টিক এবং চটের বস্তা পেতে প্রথম পড়াশুনা শুরু করে। সত্যেন্দ্র অনুভব করেছিল, যে তার ছাত্র দের বাড়িতে তাদের পড়াশোনা করানোর থেকেও সেই বাচ্চা ছেলে গুলিকে কোন কাজের সঙ্গে যোগদান করানোটা তাদের বাড়ির লোক এদের প্রধান উদ্দেশ্য। এমনকি তাকে এ কথাও শুনতে হয়েছে যে, পড়াশোনা করাটা নাকি তাদের কাছে সময় নষ্ট তার থেকে যদি চাষাবাদ করতে যায়, তাহলে অনেক বেশি পরিবারের সুবিধা হবে।
বড় হওয়ার সাথে সাথে অনেকেই অংক এবং বিজ্ঞান কে ভয় পেলেও আমাদের মত কিছু ছাত্ররাও আছে যারা বলছে তারা আগে অঙ্ককে ভয় পেলেও এখন তারা বেশ আনন্দ করে অংক সমস্যা সমাধান করে। তাই তো কবি বহুদিন আগেই বলেছেন ‘পড়াশোনা করে যে গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে’। তবে এটাও ঠিক পড়াশোনা করলে একটা সময় নিজের পায়ে দাঁড়ানো যায় নিজের অবস্থাকে উন্নতি করানো যায় কিন্তু পেট তো শুনবে না। তাই কাজকর্ম করার সাথে সাথে যদি পড়াশোনাটাও চালিয়ে যাওয়া যায় বিষয়টা হয়তো খুবই কষ্টকর কিন্তু ভবিষ্যত খুব উজ্জ্বল হবে। এরাই তো আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ। এরা যদি পড়াশোনা না করে তাহলে দেশ কেন গোটা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। সত্যেন্দ্র এর এমন অভিনব উদ্যোগকে সত্যিই কুর্নিশ জানাতে হয় ।