পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থাকে সজোরে থাপ্পড় মেরে নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তির পরিচয় দিয়েই আজকে নিজের পরিচয় তৈরী করে মহিলাদের আইকন হিসাবে প্রতিষ্ঠিত কেরালার ভারকালা থানার সাব ইন্সপেকটর অ্যানি সিবা। কেরলের মতো একটি রাজ্য যেখানে নারী পাচারচক্র পুরোদমে কাজ করে, যেখানে নারীদের তাদের বাড়ি থেকে কিডন্যাপ করে অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়, সেই রাজ্যেই এক অনন্য নজির গরলেন এই বছর ৩১ এর সাব-ইন্সপেক্টর। তবে আপনারা ভাবছেন, অনেকেই তো সাব-ইন্সপেক্টর হয় পুলিশে, এ আবার নতুন কি? না! পুলিশ ইন্সপেক্টর হওয়ার আগে যে জার্নি থাকে, সেটা অন্যদের যেরকম হয়, সেরকমটা ছিলো না অ্যানির। দারিদ্রতার মারে তিনি একটা সময় ভারকালা এলাকায় লেবুজল বিক্রি করেছেন। সেখান থেকে আজ তিনি ওই এলাকার সাব-ইন্সপেক্টর। জার্নিটা ছিল খুবই অনুপ্রেরণাদায়ী।
একদম ছাপোষা ঘরের মেয়ে অ্যানি। তবে প্রথম থেকেই তার মধ্যে একটা অদম্য ইচ্ছাশক্তি কাজ করতো। কলেজের প্রথম বর্ষে পড়ার সময় একটি ছেলের সঙ্গে প্রেম। তবে বাড়িতে বিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সম্মতি পাননি। তাই ওই ছেলেটির সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলেন অ্যানি। প্রথম কিছুদিন ভালোই চললো। কিন্তু সমস্যা তখন শুরু হলো যখন আনি সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়লেন। তার স্বামী তার এবং তার গর্ভের সন্তানকে স্বীকার করতে প্রস্তুত হল না। উপরন্তু তাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিল।
এক ছেলের জন্ম দিলেন তিনি, নাম দিলেন শিবসূর্য। বাড়িতে ফিরতে চাইলেন, কিন্তু তাকে ঘরে তুলতেই অস্বীকার করলো তার বাড়ির লোক। তাই অগত্যা কেরলের ভারকালা এলাকায় বিভিন্ন ছোটখাটো ব্যবসা করতে শুরু করেন। রাস্তায় আইসক্রিম বিক্রি করেছেন, চকলেট লজেন্স, মশলা, এমনকি সাবান পর্যন্ত বিক্রি করেছেন, এমনকি লেবু এবং লেবুজল পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। বীমা কোম্পানির এজেন্ট হিসাবে অনেকদিন কাজ করেছেন। কিন্তু তার কোনো ব্যবসা চলেনি। অনেক কাজের চেষ্টাও করেছেন। কোনো মতে দিন কাটছিল। দিনের শেষে যা রোজগার হতো তা দিয়ে কোনমতে দিন কাটছিল। সংসার, ব্যবসা সন্তান সব মিলিয়ে পড়ার সময় তেমন একটা পেতেন না। কোনমতে সমাজ বিদ্যায় গ্রাজুয়েট পাস করলেন।
তারপরেই শুরু হলো পুলিশ হওয়ার কঠিন পরিশ্রম। ২০১৪ সালে তিরুবনন্তপুরমের একটি কোচিং সেন্টারে গিয়ে পুলিশের পরীক্ষার কোচিং শুরু করেন তিনি। ছেলে, সংসার, সামলে তিনি নিজের জন্য পড়াশোনা করছিলেন। ২০১৬ প্রথম সাফল্য। পরীক্ষায় পাস করে চাকরিও পান, তবে নিচু পোস্টে। কিছুদিন চাকরি করেন। আবার ২০১৯ সালে এস আই পদের জন্য পরীক্ষায় বসেন। আর প্রথম বারেই ক্লিয়ার। তারপর ফিজিকাল ট্রেনিং আর বাকি সমস্ত ট্রেনিং শেষ করে ২৫ জুন এই ভারকালা থানার দায়িত্বে আবারো আসেন অ্যানি। যে এলাকায় এককালে লেবুজল বিক্রি করতেন, আজকে সেই এলাকার দায়িত্বেই বছর ৩১ এর অ্যানি সিভা। আজকে তিনি ভারতের নারীদের জন্য একটি আইকন, উমেন এমপাওয়ারমেন্ট এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।