শ্রেয়া চ্যাটার্জি : বছর ৩৫ এই যুবতীর নাম অঙ্কিতা শাহ। অর্থনীতিতে গ্রাজুয়েট হওয়া সত্বেও তাকে চাকরি পেতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। কারন সমাজের মানসিকতার জন্য। সমাজ তাকে সহজভাবে মেনে নেয়নি। তার প্রতিভা থাকা সত্বেও তাকে তার যোগ্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করেছে। কারণ সে শারীরিক আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো নয়।
ছোটবেলা থেকেই পোলিও আক্রান্ত এই মেয়েটি। অঙ্কিতার বাড়ি গুজরাটের পালিতানা তে। কিন্তু ওরা সপরিবারে এখন আমেদাবাদে থাকে ১০ বছর ধরে। বেঁচে থাকার তাগিদেই তাদের আমেদাবাদের চলে আসা। কিছুদিন পরেই বাবার অসুস্থতার জন্য বাবাকে তার কর্মজীবন থেকে ছুটি নিতে হয়। বাড়ির বড় মেয়ে হওয়ায় তার উপরে সমস্ত সংসারের ভারটা এসে পড়ে। সংসারের চাপে কাছাকাছি একটি স্কুলে চাকরি করা শুরু করে। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, যে তিন মাস কাজ করার পরে তাকে উপযুক্ত মাইনে দিয়ে রাখা হবে। কিন্তু অঙ্কিতা সেখানেই ১০ মাস কাজ করেছে কিন্তু একটা টাকাও পায়নি।
শুধু তাই নয় সংসারটাকে টিকিয়ে রাখার জন্য অঙ্কিতা নানা ধরনের কাজ করেছিল। কল সেন্টার, রিয়েল এস্টেট, শেয়ার মার্কেট এমনকি বিভিন্ন হোটেলেও সে কাজের লোক হিসাবে কাজ করে শুধুমাত্র পেটের তাগিদে। একটি কল সেন্টার থেকে তো তাকে দুর্বল ইংলিশ বলার জন্য তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
তবে মাসের শেষে একটা টাকা পাওয়ার আশায় অঙ্কিতার শুরু করল অটো চালানো। তার অটো চালানো শুরু হয় সকাল সাড়ে এগারোটা থেকে এবং শেষ হয় রাত আটটা পর্যন্ত। অঙ্কিতাকে অটো নিয়ে দেখা যাবে মূলত চাদখেদা এবং কালিপুর রেলওয়ে স্টেশনের চত্বরে। এই অটো চালানোর জীবিকা তাকে মাস শেষ হলে ঘরে প্রায় ২৫ হাজার টাকা এনে দিচ্ছে। যা যে কোন অফিসে চাকরি করার থেকে প্রায় দ্বিগুণ মাইনে।
সত্যি অঙ্কিতা যেকোনো মানুষের আদর্শ হয়ে উঠতে পারে। সামাজিক প্রতিবন্ধকতা এবং শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও সে যেভাবে নিজের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে তা সত্যিই অবিশ্বাস্য। তাকে দেখে অনেক মেয়েরা উদ্বুদ্ধ হোক। মানসিক ইচ্ছার মনের জোর থাকলে মানুষ সবকিছু করতে পারে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ এই মেয়েটি।