শ্রেয়া চ্যাটার্জি – ত্রিবান্দ্রামে, ৬০ বছর বয়সী বিনোদ সাহাদেবন নায়ার মাত্র ৩ একর জমিতে যেন কলাগাছের সাম্রাজ্য বানিয়ে ফেলেছেন। ৩০ বছর ধরে তিনি প্রায় ৪৩০ রকমের কলা গাছের বীজ সংগ্রহ করে বেড়িয়েছেন ভারত এবং ভারতবর্ষের বাইরে থেকে। যার জন্য ২০১৫ সালে তিনি ‘লিমকা বুক অফ রেকর্ডস’ এ নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। এছাড়াও তাকে “আই.সি.এ.আর ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টার ফর ব্যানানা”- থেকে পুরস্কৃত করা হয়। ফিজিক্সের বি.এস.সি পাশ করার পরে বিনোদ একটি ওয়েব ডিজাইনিং ফার্ম শুরু করেন কোচিতে। এ ফার্মটি বেশ ভালই চলছিল, কিন্তু তার মা মারা যাওয়ার পরে তিনি সিদ্ধান্ত নেন এটি বন্ধ করে দেবেন।
তিনি পারসালাতে ফিরে যাবেন, তার পিতার দেখাশোনা করার জন্য। তাদের নিজস্ব ৩ একর জমি ছিল। তবে সেখানে মূলত ধান চাষ হতো। তিনি জানান, “আমি যখন মাত্র ১২ বছর বয়সী, তখন আমার বাবা কলা চাষ করা শুরু করেন, তখন থেকেই আমি বাবাকে কাজে সাহায্য করতাম। স্কুলে যাওয়ার পাশাপাশি এই কাজটি কেউ আমি ভালবাসতে শুরু করলাম। এমনকি পড়াশোনার জন্য যখন পারাসালা ছাড়তে হয়েছিল কখনো সপ্তাহান্তে এসে আমি চাষের কাজ করতাম।”
তিনি শুধুমাত্র কেরালাই নয়, গুজরাট, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, আসাম, মনিপুর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে নানান রকমের কলার বীজ সংগ্রহ করতে থাকে। শুধুমাত্র ভারতের মধ্যে নয় মালয়েশিয়া, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, হাওয়াই বিভিন্ন উপকূলবর্তী জায়গার কলা গাছের বীজ সংগ্রহ করতে থাকেন। কয়েকটি রকমের নাম যেমন লেডিস ফিঙ্গার ব্যানানা, রেড ব্যানানা, ব্লু জাভা ইত্যাদি। তিনি জানান, “প্রত্যেকটা জায়গার আবহাওয়ার ভিত্তিতে এর স্বাদ একেক রকম হয়। ওট্টামুংলি, কারিংগাদ্বালি , সুরিয়াকাদালি এই ধরনের রকমফের কলা চাষ করেছেন। এই কলার নানান রকম ধরনের সঙ্গে বিনোদ সেই জায়গা কার সংস্কৃতিকে তুলে এনেছেন। যেমন ধরা যাক কন্যাকুমারীর ‘মনোরঞ্জিথাম’, যা গন্ধে অতুলনীয়।
আর সেই কারণেই এই গাছটি বিবাহের গৃহ সজ্জায় ব্যবহৃত হয়। তবে শুধুমাত্র কলাই নয়, তিনি নানান রকম সবজি, ছাড়াও ৬০ টি মুরগি ও ২০টি হাঁস পালন করেন। বিনোদ এবং তার পুত্র ভাবছেন যে কিভাবে তাদেরই চাষাবাদ কে আরো বাড়ানো যায়। নতুন নতুন চিন্তা ও তাদের মাথায় আসছে, কিভাবে কলা দিয়ে কফি, কলা দিয়ে আচার ইত্যাদি তৈরির ব্যবস্থা করা যায়, এমন সব পরিকল্পনা তাদের মাথায় ঘুরছে।