কুণাল রায় : এক কাপ চায়ে তুফান উঠল! একটু আশ্চর্য লাগছে! চায়ের কাপে আবার তুফান!! হ্যাঁ। আসলে বিতর্কের ঝড় যখন তার সীমারেখা অতিক্রম করে, সাধারণ মানুষ যখন তার ধৈর্য হারিয়ে ফেলে, তখনই ওঠে এই ঝড়। বিষয় যাই হোক না কেন, অপরিসীম জ্ঞান ও তার সাথে মিশে থাকা কৌতুহল অজান্তেই আঘাত করে বসে এই হৃদয়ে। ব্যক্তিগত বিশ্বাসের ওপর আঘাত করে। সৃষ্টি হয় এক আলোড়ন, এক অস্থিরতা যা কোন শব্দে ব্যক্ত করা কঠিন!
এই কিছুদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় এক মন্তব্য আমার এক বন্ধু দেখে ও পরে আমাকে গল্প করে। মন্তব্যটি ঈশ্বর কেন্দ্রীক। ঈশ্বর ও ঈশ্বরভাব – এই দুই আত্মউপলব্ধির ওপর নির্ভরশীল। মন্তব্যটি যে আমাদের ঘরের ঠাকুর ও তাঁর বিগ্রহ কোন ভাবেই আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারে না। অতএব কর্মই আমাদের একমাত্র অবলম্বন। “যেমন কর্ম তেমন ফল”। সত্য এক কথায়। কিন্তু এই ফলদাতা বা দাত্রী কে? এই প্রশ্ন করেছি কখন? না। অথছ বড়াই করে বলতে দ্বিধা বোধ করছি না। দর্শন অনুযায়ী ঈশ্বরের উপস্হিতি অস্বীকার করার অর্থ হল যে “তুমি আগে তাঁকে স্বীকার করেছ, পরে তাঁর অস্তিত্ব অস্বীকার করেছ”। এ ক্ষেত্রে ও সেই একই ব্যাপার ঘটেছে। ভাগ্য কর্মের ওপর নির্ভর করে। কর্মের পেছন পেছন ভাগ্য যায়। ভাগ্য একা নিষ্ক্রিয়। তাই ঈশ্বর তাকেই সাহায্য করেন যে নিজেকে সাহায্য করে। এ প্রকৃতির নিয়ম, যা কোন ভাবেই লঙ্ঘন করা সম্ভব নয়!
অন্যদিকে রয়েছে মানুষের অসীম বিশ্বাস, যা দেবতার আসনকেও টলিয়ে দিতে পারে। আমাদের পৃথিবী জুড়ে যে এই কোটি কোটি মন্দির, সহস্র কণ্ঠস্বরে এক অকুল প্রার্থনা। ফুল, ধূপ, বাজনা ও মন্ত্র উচ্চারণের মাঝে এই যে আরাধনা- সকল মিথ্যে? এই বিপুল আয়োজন, উৎসর্গ, ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ- এক নিষ্ফল প্রয়াস! তিনি কি তাহলে এক অবহেলিত মাটির বা পাথরের মূর্তি মাত্র! তাতে কি প্রাণ প্রতিষ্ঠা এক প্রহসন মাত্র!! বেদ,পুরাণ,উপনিষদ, গীতা, চন্ডী, কোরান, বাইবেল প্রভৃতি -কেবল মন ভোলানোর উপকরণ!! শক্তি ও শান্তির বার্তা বয়ে নিয়ে আসে না তাঁরা! এক চিরন্তন জিজ্ঞাসা। তবে প্রকৃত কারণ একটাই- সীমাবদ্ধতা, যা অসীমকে স্পর্শ করতে অক্ষম, যা উপলব্ধি করতে পারে না যে জীবের এই জ্ঞান মূলত মহাজাগতিক জ্ঞানের এক অংশ মাত্র! তাই বিতর্ক নয়। চাই এক টুকরো বিশ্বাস। চাই সেই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। তবেই প্রকৃত পথ খুঁজে পাওয়া সম্ভব!!