পিতৃপক্ষের অবসান ঘটিয়ে, দেবীপক্ষের শুভ সূচনা হল আজ। মহালয়া এক অতন্ত্য শুভ তিথি। আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যা তিথিকে মহালয়া বলা হয়। এই “মাহেন্দ্রক্ষণের” উল্লেখ আমরা মূলত ব্যাসদেবের রচিত ” মহাভারত ” নামক মহাকাব্যে পেয়ে থাকি।
মহাভারতে মহাবীর কর্ণ যখন স্বর্গে গমন করেন, তখন তাঁকে স্বর্ণ ও রৌপ্য ভোজনে দেওয়া হয়। ক্ষিপ্ত কর্ণ প্রশ্ন করেন দেবরাজকে যে তাঁর সাথে এমন ব্যবহার কোন উদ্দ্যেশে! তাঁর উত্তরে যামরাজ বলেন যে পৃথিবীতে থাকা কালীন উনি কোনদিন তাঁর পিতৃপুরুষের উদ্দ্যেশে তর্পণ করেননি।
শুধুমাত্র ভোগ ও ঐশ্বর্যের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন। এ কথা শুনে কর্ণ বলেন যে এতে তাঁর কি দোষ? জন্মের পর তাঁর মা তাঁকে পরিত্যাগ করেন। পরবর্তীকালে তাঁকে অধিরথ ও তাঁর স্ত্রী তাঁকে লালন পালন করে বড় করেন। ধৃতরাষ্ট্র পুত্র দুর্যোধন তাঁকে অঙ্গরাজ্যের রাজা বলে ঘোষনা করেন। এর পর কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধ আরম্ভ হয়। এই সময় মাত্র ষোল সতেরো দিন জীবিত ছিলেন। তাই তিনি সময় পাননি তাঁর পূর্বপুরুষের উদ্দেশ্যে জল প্রদান করার! বলা বাহুল্য যে কর্ণ তাঁর বংশ পরিচয় অনেক পরে পান শ্রী কৃষ্ণ ও মাতা কুন্তীর থেকে!
এই দিনে কলকাতা দূরদর্শন একটি অনুষ্ঠান শুরু করে, যা সময়ের সাথে সাথে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছায়। তবে তারও আগে বেতারে সম্প্রচারণ শুরু হয়েছিল এই দিনকে কেন্দ্র এক বিশেষ প্রভাতী অনুষ্ঠান। বিশিষ্ট শিল্পীদের পরিবেশনার পাশাপাশি বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের অমরকণ্ঠে দেবী বন্দনা আজও শিহরণ জাগায়!
১৯৭৬ সালে স্বাদ পরিবর্তনের প্রয়োজনে মহানায়ক উত্তম কুমারকে দিয়ে এই দেবী বন্দনা করানো হয়েছিল। কিন্তু জনগণ গ্রহণ করেনি। ফল স্বরূপ বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রকে দিয়ে আরো একবার মহাষষ্ঠীর দিন “মহালয়া উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানটি” পুনঃপ্রচার করা হয়। তাই মহালয়ার সাথে দুর্গাপূজার কোন যোগসূত্র নেই। শুধু বর্তমান এক অনাবিল আনন্দধারা। মা আসছেন। শঙ্খ ও উলু ধ্বনির মাঝে আগমনীর আগমন বার্তা সৃষ্টি করে শান্তি ও মৈত্রীর এক বিরল বন্ধন!!
-কুণাল রায়।