“প্যাঁচা কয় প্যাঁচানি
খাসা তোর চেঁচানি !
তোর গানে পেঁচি রে
সব ভুলে গেছি রে।”
পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী যেমন লক্ষ্মী দেবীর বাহন পেঁচা সেরকমই গ্রিক কাহিনী অনুযায়ী পেঁচা হল এথেনার প্রতীক। তিনি লক্ষ্মী দেবীর মতো ধন-সম্পদের দেবী নন তিনি স্বরস্বতীর মতো জ্ঞানের দেবী ।এথেনার বাহন হওয়ার পিছনে যুক্তি ছিল পেচা অন্ধকারেও দেখতে পাই সেটা তার দিব্যচক্ষু সেই অন্ধকারভেদী দৃষ্টিকেই শিক্ষার আলোকে সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে যা অন্ধকার আলোর দিশা দেখায়। এছাড়াও প্রাচীন মিশরের লিপিতে পেচার ব্যবহার দেখা যায়। আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ানরা পেঁচাকে জলের দানবের হাত থেকে বাঁচানোর রক্ষাকর্তা বলে মনে করতেন।
“এসো মা লক্ষী বোসো ঘরে
আমার এ ঘর রাখো আলো করে।”
আমাদের পৌরানিক কাহিনী অনুযায়ী লক্ষীদেবীর বাহন পেঁচা। লক্ষী মানে শ্রী বা সুরুচি। তিনি সম্পদ এবং সৌন্দর্যের দেবী বৈদিক যুগে ও মহা শক্তি হিসেবে তার পুজো হতো।কিন্তু একটি প্রশ্ন অনেকের মনের মধ্যে আবির্ভাব হয়েছে যে যিনি সর্ব ঐশ্বর্য সৌন্দর্যের রশ্মি ছটায় আলোকিত দেবী কিন্তু তার বাহন ক্ষুদ্র দেখতে ভালো নয় এমন জীব কেন? এই সম্পর্কে তিনটি ধারণা প্রচলিত রয়েছে কথিত আছে দুর্বাসা মুনির অভিশাপে ইন্দ্র শ্রীহীন হয় এবং এর ফলে সমুদ্রে বসবাস করতে শুরু করেন দেবী লক্ষ্মী পরে অন্যান্য দেবতাদের আরাধনায় সমুদ্র মন্থনের সময় উত্থিত হন তিনি এবং বিষ্ণুর বাহুলগ্না হন। কিন্তু চঞ্চলা দেবী কোন বাহন কি স্থায়ীভাবে নিজের দখলে রাখতে পারেননি। কুমার গুপ্তর মুদ্রায় লক্ষ্মীর পাশে দেখা যায় ময়ূরকে আবার শশাঙ্ক মুদ্রায় লোকের পাশে হয় নেপালে লক্ষ্মীর বাহন কচ্ছপ কিন্তু বাঙালির পৌরাণিক মতে হাঁস নিয়েছেন সরস্বতী ময়ূরের বাহন কার্তিক তাই বলা হয় বাধ্য হয়ে পেঁচাকে বাহন করেছে লক্ষী।
আবার বলা হয় ধান বাঙালির কাছে লক্ষী কিন্তু এই ধান ইঁদুরে খেয়ে ফেলে ধানের গোলায় ইঁদুর ঢুকে নষ্ট করে খাদ্যশস্য তাই ধানের শত্রু ইঁদুর। আর ইঁদুরকে খায় পেঁচা অর্থাৎ ধানকে রক্ষা করে ইঁদুরের হাত থেকে। তাই লক্ষ্মী দেবীর বাহন এই রাত জাগা পাখি।
তবে এই প্যাঁচার কথা বাংলা সাহিত্যেও উঠে এসেছে জীবনানন্দের কল্পনা এসেছে একটি কবিতা –
তবু রোজ রাতে আমি চেয়ে দেখি আহা
থুরথুরে অন্ধ পেচা অশ্বত্থের ডালে এসে বসে
চোখ পালটায়ে কয়, বুড়ি চাঁদ গেছে বুঝি বেনো জলে ভেসে ?
চমৎকার ধরা যাক দু-একটা ইঁদুর এবার….
তবে লক্ষ্মীদেবীর বাহন হিসেবে পন্ডিতদের যে মতটি সর্বাধিক গ্রহনযোগ্য তা হলো যিনি লক্ষ্মী গুন অর্থাৎ সত্য প্রেম পবিত্রতা তপস্যা তিতিক্ষা পেতে চান তাকে পেচক ধর্ম পালন করতে হবে অর্থাৎ জাগতিক বস্তু থেকে একটু দূরে থেকে নির্জনে যোগৈশ্বর্য ও সাধন সম্পদ রক্ষা করতে হয় পেঁচা যদি দিনের বেলায় বের হয় অন্যান্য পাখিরা তাকে তাড়া করে অতি গোপনে পেচা বাস করে। সেরকমই পূর্ণতা লাভ না করা পর্যন্ত জাগতিক বিষয় ব্যক্তি দৈব সম্পদ নষ্ট করে।এসব কারনে পেচাকে লক্ষীর বাহন হিসেবে রেখে দিয়েছেন।
Written by – দেবস্মিতা ধর