সিগন্যাল দেওয়ার পর তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়, উড়িষ্যা ট্রেন দুর্ঘটনার সবচেয়ে বড় কারণ জানা গেল
ওড়িশা ট্রেন দুর্ঘটনার জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি বসানো হয়েছে ওড়িশা সরকারের তরফ থেকে
ওড়িশার বালাসোরে শুক্রবার একটি ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় ২৬১ জন যাত্রী মারা গিয়েছেন এবং ৯০০ জনেরও বেশি লোক আহত হয়েছেন। একটি মালগাড়ির সাথে সংঘর্ষ হয়েছিল করমন্ডল এক্সপ্রেস এবং বেঙ্গালুরু টু হাওড়া এক্সপ্রেসের। এবার এই দুর্ঘটনার যৌথ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে যেখানে দুর্ঘটনার পিছনের আসল কারণটি বেরিয়ে এসেছে। জানা গিয়েছে সিগন্যালিং সংক্রান্ত ভুলের কারণেই এই বিশাল বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাহানগা বাজার স্টেশনে একটি পণ্যবাহী ট্রেন লুপ লাইনে দাঁড়িয়েছিল অনেকক্ষণ ধরেই। সেই সময় করমন্ডল এক্সপ্রেস ওই স্টেশনে পৌঁছায়। একটি ট্রেন যখন লুপ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে তখন অন্য একটি ট্রেনকে সামনে পাঠিয়ে দিতে হয়। করমন্ডল এক্সপ্রেসকে এগিয়ে দেবার জন্যই ওই মাল গাড়িকে লুপ লাইনে দাঁড় করানো হয়েছিল।
কিন্তু সেখানেই হয়ে যায় গন্ডগোল। এর আগে আপ মেইন লাইনের জন্য করমন্ডল এক্সপ্রেসে সিগনাল পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু পরে সেই সিগন্যাল প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু ততক্ষণে করমন্ডল এক্সপ্রেস ওই আগের সিগন্যাল মত এগিয়ে গিয়েছে। ফলে সরাসরি লুপ লাইনে গিয়ে এই ট্রেনটি ধাক্কা খেয়ে যায় ওই পণ্যবাহী ট্রেনের সঙ্গে। পণ্যবাহী ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষের পর সমস্ত বগি লাইনচ্যুত হয়ে যায় করমন্ডল এক্সপ্রেসের।
করমন্ডল এক্সপ্রেসের যাত্রী অনুভব দাস যিনি কোনক্রমে ওই দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গিয়েছেন, তিনি ওই দুর্ঘটনার কথা বর্ণনা করেছেন। টুইটারে একটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আমি খুবই ভাগ্যবান যে হাওড়া থেকে চেন্নাইগামী করমন্ডল এক্সপ্রেস ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হওয়া সত্বেও আমি নিরাপদে বেঁচে গিয়েছি। এটাই সম্ভবত সব থেকে বড় ট্রেন দুর্ঘটনা।’ তিনি আরো লিখেছেন, ‘ট্রেনের লাইনে 200 থেকে 250 জন যাত্রীর লাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখেছি আমি। এটা এমন একটা দৃশ্য যা আমি কখনোই ভুলবো না।’
ইতি মধ্যেই উড়িষ্যা সরকার ট্রেন দুর্ঘটনার জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত শুরু করেছে। এই তদন্তের নেতৃত্বে থাকবেন দক্ষিণ পূর্ব ব্লকের রেলওয়ে নিরাপত্তা কমিশনার। রেলের তরফে জানানো হয়েছে, ভারত সরকারের তরফ থেকে ট্রেনগুলিকে সংঘর্ষ থেকে বাঁচানোর জন্য যে কবচ প্রযুক্তি নিয়ে আসা হয়েছিল তা এখনো পর্যন্ত এই রুটে উপলব্ধ নেই। কিন্তু এই প্রযুক্তি এখনো কেন উপলব্ধ করানো হয়নি সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভারতীয় রেলের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মা জানিয়েছেন, উদ্ধার অভিযান শেষ হয়েছে। এই রুটে আরমার ব্যবস্থা ছিল না। কবচ ব্যবস্থাও ছিল না। এর আগেও এই রুটে দুর্ঘটনা ঘটেছে। করমন্ডল এক্সপ্রেস এর আগেও একবার দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল। তাই এই রুটে কবচ সিস্টেম দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে চলেছি আমরা, যাতে এই রুটে আর কোনরকম দুর্ঘটনা না ঘটে।