ব্যবসা-বানিজ্য ও অর্থনীতিToday Trending Newsদেশনিউজ

৮ বছরে দ্বিগুণ লাভের সুযোগ, আপনি বিনিয়োগ করছেন সরকারের এই স্কিমে?

ভারত সরকারের তরফ থেকে এই বিশেষ গোল্ড বন্ড নিয়ে আসা হয়েছিল মানুষের কথা চিন্তা করেই

Advertisement

৮ বছর আগে ২০১৫ সালে সোনার বিনিয়োগের জন্য ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক চালু করেছিল SOVREIGN GOLD BOND বা SGB। এটি একটি এমন বন্ড যেখানে বিনিয়োগকারীরা টাকা বিনিয়োগ করে খুব সহজেই লাখপতি হয়ে যেতে পারেন। সোনা না কিনেও, এই বন্ডে বিনিয়োগ করে সোনায় বিনিয়োগের সমস্ত সুবিধা নিতে পারেন বিনিয়োগকারীরা। সোনার দাম অনুযায়ী বন্ড কিনতে পারেন বিনিয়োগকারীরা এবং নির্দিষ্ট সময় পর সেই বন্ডের মূল্য এবং সুদের সমষ্টি ফেরত পাওয়ার সুবিধা রয়েছে। এই ধরনের বন্ডের ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা রয়েছে এবং তার সাথেই জড়িত রয়েছে কিছু অসুবিধা।

সুবিধা কি কি আছে?

প্রথমে সুবিধার কথা বলতে গেলে SGB তে যে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করে থাকেন তারা আট বছর পর বন্ডের মূল্য এবং ৮% বার্ষিক সুদ হিসেবে টাকা ফেরত পেয়ে থাকেন। এই প্রকল্পটি আট বছরের জন্য হলেও কেউ চাইলে পঞ্চম বছরের পরে খুব সহজেই তার টাকা তুলতে পারেন। কিন্তু খুব কম লোকই এমন রয়েছেন যারা সময়ের আগে টাকা তোলেন। আর এই টাকা কিন্তু একেবারেই করমুক্ত। ২০১৫ সালের প্রথম ব্যাচে রিজার্ভ ব্যাংকে এক গ্রাম সোনার দাম ছিল ২৬৮৪ টাকা। কিন্তু এখন ৩০ নভেম্বর ২০২৩ সালে রিজার্ভ ব্যাংকে এই পরিমাণ সোনার দাম ৬১৩২ টাকা। অর্থাৎ দেখতে গেলে, এই ৮ বছরে যদি আপনি গোল্ড বন্ডে বিনিয়োগ করে থাকেন, তাহলে আপনি এক গ্রাম সোনায় ৩৪৪৮ টাকা আয় করতে পারবেন। অর্থাৎ আপনি প্রায় ১২৮% রিটার্ন পেয়ে যাবেন।

বন্ড এবং জুয়েলারির মধ্যে পার্থক্য কি?

রিজার্ভ ব্যাংক আগের থেকে এখন অনেক কম বন্ড ইস্যু করা শুরু করেছে। এটার পিছনে একটা কারণ রয়েছে। ২০২১-২২ সালে, এই গোল্ড বন্ডের দশটি সিরিজ এনেছিল রিজার্ভ ব্যাংক , যার মোট মূল্য ছিল ৩৭৫০০ কোটি টাকা। তবে এত কোটি টাকা বিনিয়োগ করার পরেও, এই গোল্ড বন্ড মানুষ কিনতে চাননি। সেই কারণেই গত বছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে বন্ডের মাত্র ৪টি সিরিজ আনা হয়েছিল যার মোট পরিমান ছিল মাত্র ১৬২৫০ কোটি টাকা।

কেন এই ধরনের গোল্ড বন্ড বিক্রি কম হয়?

এই ধরনের SGB বিক্রি কম হবার পিছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণগুলি হলো –

১. জুয়েলারির প্রতি মানুষের আগ্রহ কিছুটা হলেও বেশি। গোল্ড বন্ড কিনলে আপনি জুয়েলারি দেখাতে পারবেন না। ভারতে জুয়েলারি দেখানোর ক্ষেত্রে যে অহংকার কাজ করে, সেটা কিন্তু গোল্ড বন্ডের থেকে অনেক বেশি। সেই কারণেই ভারতের অনেক মানুষ জুয়েলারি কিনতে বেশি পছন্দ করেন বন্ডের থেকে।

২. এই ধরনের গোল্ড বন্ড এই কারণেই নিয়ে আসা হয়েছিল যাতে, জুয়েলারির পরিমাণ কমানো যায় এবং মানুষ ব্যাংকের সাথে সরাসরি লেনদেন করেন। কিন্তু এখন ব্যাংকে যাওয়ার সময় কারো কাছে নেই। সেই কারণেই এখন অনেকে এই ধরনের গোল্ড বন্ড কিনতে পছন্দ করেন না কারণ এই BOND শুধুমাত্র ব্যাংকে গেলে তবেই কেনা যায়।

৩. SGB তে সুদের হার অন্যান্য বিনিয়োগের জায়গা থেকে অনেকটাই কম। যদি কোন বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করতে চান তাহলে তিনি অবশ্যই শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করবেন। গোল্ড বন্ডে সুদের হার মাত্র ৮ শতাংশ। যেকোনো ভালো ফিক্স ডিপোজিটে টাকা বিনিয়োগ করলেও এরকম সুদের হার পাওয়া যায়। তাই গোল্ড বন্ড কেনার রীতিমতো কোন মানে হয় না। সেই কারণেই যারা বিনিয়োগ করতে চান তারা মূলত শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করেন, আর যারা টাকা শুধুমাত্র সুদ বৃদ্ধি করার জন্য রাখতে চান তারা গোল্ড বন্ড না কিনে ফিক্স ডিপোজিটে টাকা বিনিয়োগ করেন।

এর ভবিষ্যৎ কি?

এই গোল্ড বন্ড আনা হয়েছিল গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে। এই গোল্ড বন্ডে বিনিয়োগ করা থাকলে গ্রাহকদের জুয়েলারি কিনতে হবেনা। তার পাশাপাশি তাদের বারবার গিয়ে ব্যাংকের লকারে সোনা রাখতে হবে না। কিন্তু সরকার, এই গোল্ড বন্ড ইস্যু করে বিশেষ কিছু সফলতা পায়নি। বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করার জন্য এই গোল্ড বন্ড নিয়ে আসা হয়েছিল বটে, কিন্তু ভারতের মানুষ খুব একটা ভালোভাবে এই বন্ড গ্রহণ করেননি। করোনা এবং মহামারীর সময় সোনার বন্ড এর দাম দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল। সেই সময় ব্যাংকে গিয়ে অনেকেই গোল্ড বন্ড কিনেছিলেন। কিন্তু এখন যেহেতু শেয়ার মার্কেট আবারো চাঙ্গা হয়ে উঠেছে, তাই গোল্ড বন্ডে বিনিয়োগের পরিমাণ আবার কমেছে। ফলে এর ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনই কিছু বলার না গেলেও, যদি এই গোল্ড বন্ডের বিক্রি বাড়াতে হয় তাহলে জনগণের জন্য সুবিধা আরো বাড়াতে হবে এবং বিক্রির প্রক্রিয়া আরো সহজ করতে হবে। বিশেষত ব্যাংকে গিয়ে কেনার বিষয়টা সরাতে হবে সরকারকে।

Related Articles

Back to top button