শ্রেয়া চ্যাটার্জি :
দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর
কবি এ কথা বহুদিন আগেই বলে গেছেন। তিনি হয়তো বহুদিন আগেই বুঝতে পেরেছিলেন যে, আমরা যে হারে উন্নতি চাইছি, এবং তার জন্য যেভাবে আমরা প্রকৃতিকে নষ্ট করতে চলেছি এর ফল একদিন প্রকৃতি আমাদের ফেরত দেবে। তবে প্রকৃতি আমাদের মা। মা কখনো সন্তানকে কষ্ট দিতে পারে না। বুকের মধ্যে আগলে রাখে।
আগলে রাখার এক দৃষ্টান্ত আমরা কদিন আগেই দেখলাম। বুলবুলের তাণ্ডবে তছনছ হয়ে গেছে বকখালি, নামখানা, ফ্রেজারগঞ্জ সুন্দরবনের এক বিস্তীর্ণ এলাকা। মানুষের চোখে মুখে শুধুই আতঙ্ক। সরকারি তৎপরতায় ঝড় আসার আগেই তারা নিজস্ব ঘর বাড়ি ত্যাগ করে জায়গা নিয়েছিলেন বিভিন্ন শিবিরে।
বুকের মধ্যে ভয় মনের মধ্যে আতঙ্ক নিয়ে তারা সেই রাতটা কাটিয়ে ছিল। বাসস্থান, সম্পত্তি একেবারে শেষ হয়ে গেছে। তবে ওইখানকার মানুষগুলো বোধহয় এটাতে খানিকটা অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। বারবার ঝড় গুলির দাপটে তারা যেন কিছুতেই নিজেদের ভবিষ্যতকে গুছিয়ে উঠতে পারেন না।
কিন্তু আরো হতে পারত। দক্ষিণাঞ্চল পুরো শেষ হয়ে যেতে পারত কারণ বুলবুল তোর শুধু নয় এর আগেও অনেক ঝড়ের দাপট সহ্য করেছে এই অংশটি। এর একমাত্র কারণ ম্যানগ্রোভ অরণ্য। ম্যানগ্রোভ বাঁচিয়ে দিল পশ্চিমবঙ্গ কে। তবে শুধু পশ্চিমবঙ্গ বললে ভুল হয় বাংলাদেশকেও বাঁচিয়েছে ম্যানগ্রোভ। অতীতের পাতা ঘাটলে দেখা যায় বুলবুল এর মতন আয়লার সময়ও ঠিক এই একই ভাবে প্রবল ঝড়ের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল ম্যানগ্রোভ অরণ্য।
এ প্রসঙ্গে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলেছেন শক্ত শিকড় দিয়ে গাছগুলি দাঁড়িয়েছিল, এবং যতটা সম্ভব ঝড়কে প্রতিহত করা যায় ততটাই করেছে। সাগরদ্বীপ, মৌসুনি দ্বীপ প্রভৃতি জায়গায় যেখানে ম্যানগ্রোভ নেই, সেখানে ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশি হয়েছে।
সবশেষে তাই একটাই বার্তা, বনাঞ্চল রক্ষা হোক, গাছপালা টিকে থাকুক। পৃথিবীর সবুজে সবুজ হয়ে উঠুক।