অষ্টম বেতন কমিশনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন কেন্দ্রীয় কর্মীরা। কিন্তু মনে হচ্ছে সরকার এখন আর কোনো কমিশন গঠনের মুডে নেই। অন্তত তেমনই ধারণা সকলের। সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে আরেকটি বেতন কমিশন গঠনের প্রয়োজন নেই।
অর্থাৎ, এক অর্থে পে কমিশনের দিন শেষ। সরকার এমন একটি সিস্টেম নিয়ে কাজ করছে যা কর্মীদের পারফরম্যান্সের (পারফরম্যান্স লিঙ্কড ইনক্রিমেন্ট) ভিত্তিতে বেতন বাড়ায়। এ জন্য আইক্রয়েড ফর্মুলার ভিত্তিতে সব ভাতা ও বেতন পর্যালোচনা করা যেতে পারে।
কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের বেতন কাঠামো পরিবর্তনের জন্য প্রতি দশ বছর অন্তর একটি বেতন কমিশন গঠন করা হয়। তার সুপারিশের ভিত্তিতেই কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের বেতন নির্ধারণ করা হয়। এ নিয়ে এ পর্যন্ত সাতবার বেতন কমিশন দেওয়া হয়েছে।
প্রথম বেতন কমিশন গঠিত হয় ১৯৪৬ সালের জানুয়ারিতে এবং সপ্তম বেতন কমিশন গঠিত হয় ২০১৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি। সোমবার সংসদে অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরি জানান, বর্তমানে অষ্টম কেন্দ্রীয় বেতন কমিশন গঠনের কোনও প্রস্তাব সরকারের বিবেচনাধীন নেই।
পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে বেতন বৃদ্ধি
অধীর চৌধুরী লোকসভায় এক প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের জন্য অষ্টম কেন্দ্রীয় বেতন কমিশনের প্রস্তাব সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে কিনা, যাতে ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে তা কার্যকর করা যায়। অষ্টম বেতন কমিশন থাকবে না বলে যে দাবি করা হচ্ছে, তা উড়িয়ে দিয়েছেন অধীর চৌধুরী। কিন্তু সরকারের সদিচ্ছা থেকে এটা স্পষ্ট যে, এ ধরনের কোনো কমিশন গঠনের মুডে সরকারের নেই।
সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের বেতন, ভাতা ও পেনশন পর্যালোচনা করার জন্য আরেকটি বেতন কমিশন গঠনের প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন চৌধুরি। তবে বেতন ম্যাট্রিক্স পর্যালোচনা ও সংশোধন করার জন্য একটি নতুন পদ্ধতি নিয়ে কাজ করা উচিত। তিনি বলেন, সরকার এমন একটি ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছে যাতে কর্মীদের পারফরম্যান্সের (পারফরম্যান্স লিঙ্কড ইনক্রিমেন্ট) ভিত্তিতে কর্মীদের বেতন বাড়ে। তিনি বলেন, আইক্রয়েড ফর্মুলার ভিত্তিতে সমস্ত ভাতা এবং বেতন পর্যালোচনা করা যেতে পারে।
এই সূত্রের সাহায্যে কর্মীদের বেতন মুদ্রাস্ফীতি, জীবনযাত্রার ব্যয় এবং কর্মচারীদের কর্মক্ষমতার সাথে যুক্ত হবে। এসব বিষয় মূল্যায়ন করলেই বেতন বাড়বে।
এতে সব শ্রেণির চাকরিজীবী উপকৃত হবেন। সপ্তম বেতন কমিশনকে দেওয়া সুপারিশে বিচারপতি মাথুর বলেছিলেন, ‘আমরা আয়ক্রয়েড ফর্মুলায় বেতন কাঠামো স্থির করতে চাই। এক্ষেত্রে জীবনযাত্রার ব্যয়ও বিবেচনায় নেওয়া হয়। এই সূত্রটি দিয়েছিলেন ওয়ালেস রুডেল আইকারোইড। তিনি বিশ্বাস করতেন যে খাদ্য ও বস্ত্র সাধারণ মানুষের জন্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। তাদের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মীদের বেতনও বাড়াতে হবে।’
মূল্যস্ফীতির পরিপ্রেক্ষিতে কর্মচারীদের বেতন বাড়াতে সরকার কী করছে জানতে চাইলে অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ জন্য তাদের মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) দেওয়া হয়। মুদ্রাস্ফীতির হার শিল্প শ্রমিকদের জন্য সর্বভারতীয় ভোক্তা মূল্য সূচকের ভিত্তিতে গণনা করা হয় এবং এর ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা প্রতি ছয় মাস অন্তর সংশোধন করা হয়। এদিকে কেন্দ্রীয় কর্মচারীরাও ডিএ-র জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। সরকার এ বিষয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত নিতে পারে।