সুরজিৎ দাস : সালটা ১৯২০ তখনো কলিকাতা আজকের তিলোত্তমা হয়ে ওঠেনি। কলকাতার বাসিন্দাদের মনোরঞ্জনের একটা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ছিলো ফুটবল আজকের মতোই। মোহনবাগান, কুমোরটুলি, জানবাজার, ভবানীপুর, উয়ারি, মোহামেডান দের মতো দলের খেলা দেখতে ভিড় উপচে পড়তো ময়দান জুড়ে। কোচবিহার ট্রফির একটি ম্যাচে পূর্ব বঙ্গীয় ফুটবলারকে মাঠে নামতে না দেওয়ার সেদিন ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলো কলকাতার পূর্ব বঙ্গীয় সমাজ। শৈলেশ বসু, নসা সেন, সুরেশ চৌধুরী, তড়িৎ ভূষণ রায় দের মতো তৎকালীন সমাজের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ আওয়াজ তুলেছিলেন এই বঞ্চনার বিরুদ্ধে।
তারা সিদ্ধন্তে উপনীত হন নতুন ক্লাব তৈরি করার যার প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে থাকবে বঞ্চনা, অপমানের জবাব। শোনা যায় আধুনা ঢাকা নিবাসী দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ এর বাড়িতে এক আড্ডার আসর ছিলো “ইস্টবেঙ্গল” নামের শৈলেশ বসুর অনুরোধে সেই ইস্টবেঙ্গল নাম টিকে নতুন ক্লাবের নাম হিসেবে ঠিক করা হয়, কিন্তু ক্লাবের জার্সি কি হবে সেই নিয়ে দোটানায় পড়ে যান সবাই। কথিত আছে একদিন চৌরঙ্গীর একটি দোকেন লাল-হলুদ রঙ্গের একটা জার্সি খুব মনে ধরে শৈলেশ বসু, সুরেশ চৌধুরী দের এবং পরবর্তীকালে সেই জ্বলজ্বলে অগ্নি স্ফুলিঙ্গ খোচিত জার্সি কেই ইস্টবেঙ্গল এর জার্সি রূপে ঠিক করা হয়।
ব্যাস সেই থেকে পথ চলা শুরু ইস্টবেঙ্গলের। কিন্তু ১৯১১ সালে ব্রিটিশ দের হারিয়ে শিল্ড যেতা মোহনবাগান যে ভাবে জনপ্রিয় ছিলো বাংলা সমাজে সেখানে এই নতুন ক্লাব কতোটা দাগ কাটতে পারবে সে নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলো। সেই প্রশ্নের উত্তর আজ বর্তমান কলকাতা দেয় মোহনবাগানের পাশাপাশি ইস্টবেঙ্গল সমান ভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করে একশো বছর আগে থেকেই যা এখনো অটূট। আজ হয়তো “বড়ো ম্যাচে” ইডেন ভরে যায় না কিন্তু নাম বদলে “কলকাতা ডার্বি” সেই একই ভাবে দর্শক টানে যুবভারতীতে। আজও ইস্ট-মোহন দ্বৈরথে কলকাতা ভাগ হয়ে যায়। শতবর্ষের পূন্যলগ্নে দাঁড়িয়ে আরোও একবার স্মরণ করা যাক সেই শৈলেশ বসু, নসা সেন, সুরেশ চৌধুরী দের। ইতিহাসের পাতা থেকে তুলে আনা যাক সেই সোনায় মোড়া দিন টিকে যদিন “অপমানের যোগ্য জবাব” হয়ে উঠেছিলো সাদা চামড়ার গোলাকার বল টা আর বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ টা।