১০০ বছর অন্তর বারবার ফিরে এসেছে মহামারী, এ ঠিক যেন এক কাকতালীয় ঘটনা

শ্রেয়া চ্যাটার্জি : ২০২০ সাল পড়তে না পড়তেই গোটা বিশ্ব এ এক মহামারীর আকার ধারণ করেছে করোনাভাইরাস। কিন্তু অদ্ভুত ভাবেই প্রকৃতি খেলা দেখিয়েছে ১০০ বছর অন্তর অন্তর। কি করে ঠিক ১০০ বছর অন্তর এই মহামারী বারবার ফিরে এসেছে এর কোন উত্তর বিশেষজ্ঞরা দিতে পারেননি।

১৭২০ সালে ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছিল বিউবনিক প্লেগ। এই রোগের উৎস ছিল মার্সেইল। সেখান থেকে ধীরে ধীরে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এটি মহামারীর আকার ধারণ করে। নাম দেওয়া হয়েছিল ‘গ্রেট প্লেগ অফ মার্সেইল’। এর আরেকটি নাম ও দেওয়া হয় যা হল ‘ব্ল্যাক ডেথ’। পাঁচিল তুলে দেওয়া হয় বিভিন্ন জায়গায় যাতে এই রোগটি আর না ছড়াতে পারে।

১৮২০ সাল, ঠিক ১০০ বছর পরে মহামারীর আকার ধারণ করল কলেরা। গোটা বিশ্বে মৃত্যু হয় প্রায় ৪ কোটি মানুষের। মৃত্যুর মিছিল চলে চীন রাশিয়া এবং ভারতে।

এবার সালটা ১৯২০। আবারও ঠিক ১০০ বছর পরে। এবার থাবা বসালো স্প্যানিশ ফ্লু। দু’বছর ধরে এই ফ্লুতে যেখানে মৃত্যু হয় ৪ কোটি মানুষের। তবে হু জানায় সংখ্যাটি ৫ কোটি। অনেক মানুষ মারা গেলেও ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সী মানুষের ওপর বেশি পরিমাণে থাবা বসিয়েছিল এই স্প্যানিশ ফ্লু। উত্তর আমেরিকা, ইউরোপের দেশগুলো এর থাবা থেকে রেহাই পায়নি। ট্রলিতে বোঝাই করে মৃতদেহ নিয়ে গিয়ে একসঙ্গে সৎকারের ব্যবস্থা করা হচ্ছিল।

এবার সালটা ২০২০, আবারো ফিরে এসেছে মহামারী। এবারে রোগটির উৎস করোনাভাইরাস। যার উৎস স্থল চীন এর উহান। তবে চীন এখন খানিকটা কাটিয়ে উঠেছে। এখনো সামলে উঠতে পারছে না ইতালি। ইতালিতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপরে সেখানকার দেশের মানুষের এতোটাই আস্থা ছিল যে, সরকারের নির্দেশনাকে অগ্রাহ্য করে তারা দিনের পর দিন কাটিয়েছে। সিনেমা দেখেছে, শপিংমলে গেছে, পার্টি করেছে। যার ফলে ইতালিতে করোনাভাইরাস মহামারীর আকার ধারণ করেছে। ক্রমশ বেড়েই চলেছে মৃত্যু-মিছিল। একসময় যে শহরগুলো জনমানবের পদধ্বনিতে গমগম করত, সেই শহর কার্যত এখন ‘ভুতুড়ে শহরে’ পরিণত হয়েছে। প্রিয়জনের মৃত্যুর পর শেষ দেখা টুকু দেখতে পাচ্ছেন না মানুষ। অসহায় অবস্থা।

হয়তো আবারো ১০০ বছর পরে নতুন কোন রোগ নিয়ে দেখা দেবে মহামারী। তখন ইতিহাসের পাতায় ২০২০ সালে এই কোন ভাইরাসের আক্রমণও লেখা থাকবে। প্রতিবার মহামারী দেখিয়ে দিয়েছে সে কোনরকম ধনী-গরীব, উচ্চ নীচ ভেদাভেদ করে না। বিপদে পড়লে সবাই এক। কাল পর্যন্ত হয়তো যে মানুষটা তার চাকরি টিকিয়ে রাখার জন্য অথবা প্রেমকে টিকিয়ে রাখার জন্য সদাব্যস্ত হয়ে উঠেছিল, আজকে সেই মানুষটাই শুধু বাঁচতে চায়।