শ্রেয়া চ্যাটার্জি – নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত বাঙালি মানেই ভাতের সঙ্গে ডাল থাকবেই। মুসুর ডাল সিদ্ধ কিংবা ঘন ঘন করে মুগের ডাল অথবা ব্রেকফাস্টে চানার ডাল, বিয়ে বাড়িতে গিয়ে ডাল মাখানি সবকিছুতেই খাদ্য তালিকা জুড়ে রয়েছে ডাল। শুধু বাঙালি নয়, ভারতবাসীদের খাদ্য তালিকাতেও ডাল তার নিজস্ব জায়গা করে নিয়েছে কিন্তু একটু ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে প্রত্নতত্ত্ববিদদের খুঁজে পাওয়া প্রত্নবস্তু প্রমাণ করে যে, এই প্রিয় খাদ্য ডালটি অনেকদিন আগেই ভারতবর্ষে আবির্ভাব হয়েছে। এর আগমন সেই হরপ্পা সভ্যতায়। ভারতীয়রা ডাল অনেকভাবেই খান। কখনো মুসুর ডালের সুপ করে কখনো বা মুগের ডাল এর মধ্যে সবজি দিয়ে অথবা মাংস দিয়ে বানানো ডালও দেখা যায়। খুব সাধারণ ‘তড়কা ডাল’ থেকে শুরু করে ‘ডাল মাখানি’ অনেক রেস্টুরেন্টে এগুলি থাকে খাদ্য তালিকার মধ্যে।
মুগ, মুসুর, অড়হড় মোটামুটি ভারতবর্ষের সব জায়গাতেই খাদ্যতালিকায় দেখা যায়। তবে বিভিন্ন জায়গায় এই ডাল তৈরি করার পদ্ধতি বিভিন্ন রকম। সাধারণত ফারাকটা মসলার উপর ভিত্তি করেই হয়। পুরাতন ভারতীয় ইতিহাসের কিছু তথ্য প্রমাণ থেকে জানা যায়, অতীতকালে ডাল পরিবেশন করা হতো খুব অভিজাত একটি পদ হিসাবে। ৩০৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের বিয়ের সময় পরিবেশন করা হয়েছিল ঘুগনি ডাল। এখন যা ভারতীয়দের জনপ্রিয় একটি ‘পথখাবার’ বললেও ভুল হয় না। পাঁচমেল কিংবা পঞ্চরত্ন ডাল এসেছে মেওয়ারের রাজ পরিবার থেকে। তবে শাহজাহানও এই ডাল খেতে বেশ ভালোবাসতেন। তবে তার জন্য বানানো হতো ‘শাহী পঞ্চরত্ন ডাল’। তবে এই খাদ্যটি ঔরঙ্গজেবেরও বেশ পছন্দ ছিল। তিনি নিজে একজন নিরামিষভোজী ছিলেন।
সবচেয়ে মজার কথা, এই পঞ্চরত্ন ডালের উল্লেখ পাওয়া যায় মহাভারতে। যেখানে ভীম খুব অল্প আঁচে মাটির পাত্রে পঞ্চরত্ন ডাল বানাচ্ছেন এবং ডালটির ওপরে খুব যত্ন করে এক চামচ ঘি ঢেলে দিচ্ছেন। এই হল ডালের ইতিহাস। এত ডালের কথা শুনে যদি জিভে জল চলে আসে, তাহলে কালকেই বানিয়ে ফেলুন নিজের মনের মত রেসিপি ডাল দিয়ে। তবে ডাল যে শুধুমাত্র ভাত দিয়ে খাওয়ার জন্যই ভারতীয়রা ব্যবহার করে তা নয়। খাবার শেষে মিষ্টি ও বানানো যায় এই ডাল দিয়ে যেমন মুগের ডাল দিয়ে মুগের নাড়ু, ছোলার ডালের বরফি। রসগোল্লা, সন্দেশ এর মতন মিষ্টি না হলেও মোটামুটি মিষ্টি বলে চালানো যাবে।