শ্রেয়া চ্যাটার্জি – সহজ পাঠের একাদশ পাঠে অনেকেরই হয়তো মনে আছে, যাদের মনে নেই, তাদের একটু মনে করিয়েদি সেখানে লেখা ছিল “শক্তি বাবু বললেন এইখানে একটু বিশ্রাম করি। সঙ্গে ছিল লুচি আলুর দম আর পাঁঠার মাংস। তাই খেলেন। আক্রম খেলো চাটনি দিয়ে রুটি।” ২৫ শে বৈশাখের দিন এ কথা উল্লেখ করতেই হয় কবিগুরুর খাবারের পছন্দের তালিকায় ছিল পাঁঠার মাংস। শুধুমাত্র কবিগুরু না বাংলা সাহিত্য একটু ঘাঁটলে দেখা যাবে অনেকেই পাঁঠার মাংস নিয়ে নানান রকমের গল্প লিখেছেন বাস্তব জীবনেও ঘটেছে। ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন সাক্ষাৎ অন্নপূর্ণা। পাঁঠার মাংস তিনি খুব সুন্দর রান্না করতে পারতেন।
একবার তো দুই সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র এবং সঞ্জীবচন্দ্র কে বাড়িতে নেমন্তন্ন করে পাঁঠার মাংসের ঝোল, ভাত, পাঁঠার মেটের অম্বল খাইয়েছিলেন। সেই শুনে বঙ্কিমচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে রীতিমতো সার্টিফিকেট দিয়ে বলে গেছেন তার পাঁঠার মাংসের অম্বল একেবারে অসাধারণ। দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রিয় খাবার ছিল পাঁঠার মাংসের হাড়ের অম্বল। তিনি তার ‘গুম্ফ আক্রমণ’ কাব্যে লিখেছিলেন –
বৃহৎ রুপার থালে/ পাচক ব্রাহ্মণ ঢালে/ মাংসের পোলাও গাদাগাদা/ কি গুন পাঁঠার হাড়ে/ অম্বলের তার বাড়ে /কে বুঝিবে ইহার মর্যাদা।
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ মাংস, পোলাও খেয়ে দু সের রসগোল্লা খেয়ে ফেলতেন। পাঁঠার মাংসের কথা বললেই রবিবারের দুপুর বেলা গরম গরম ভাত আর ধোঁয়া ওঠা কষা পাঁঠার মাংসের কথা চোখের সামনে ভাসে। যারা কলকাতার দিকে থাকেন তাদের কাছে খুব অতি পরিচিত একটি নাম হল গোলবাড়ির কষা পাঁঠার মাংস। তবে সব সময় যদি বাইরে গিয়ে খেতে ইচ্ছা না করে, আর লকডাউনের বাজারে যদি কষা পাঁঠার মাংস বাড়িতেই বানিয়ে নিতে চান, তাহলে জেনে নিন এই রেসিপিটি
উপকরণঃ ১ কেজি খাসির মাংস, দুটো বড় পেঁয়াজ, ২ বড় চামচ রসুন বাটা, ২ চামচ আদা বাটা, ১ বড় চামচ কাঁচা লঙ্কা বাটা, ৩ বড় চামচ জিরা গুঁড়ো, স্বাদমতো লঙ্কাগুঁড়ো, তিন বড় চামচ টক দই, নুন, মিষ্টি স্বাদ মত, এলাচ, দারচিনি, লবঙ্গ, কয়েক টুকরো কাঁচা পেঁপে, আলুর টুকরো।
প্রণালীঃ প্রথমে একটি বড় কড়াইতে সরষের তেল ঢেলে তা গরম করে টুকরো করা আলু হলুদ, নুন মাখিয়ে ভালো করে ভেজে তুলে রাখতে হবে। তারপর কড়ার মধ্যে শুকনো লঙ্কা, তেজপাতা, এলাচ, লবঙ্গ, দারুচিনি ফোড়ন দিতে হবে। সুগন্ধ বের হলে পেঁয়াজ কুচি ভালো করে ভাজতে হবে। পেঁয়াজ লাল লাল করে ভাজা হলে তার মধ্যে মাংস ও অল্প একটু নুন দিতে হবে। ১০-১৫ মিনিট রান্নার পর মাংসটাকে সমানে ভেজে যেতে হবে। যোগ করতে হবে রসুন বাটা, আদা বাটা, লঙ্কা বাটা, জিরা বাটা দিতে হবে। সাথে একটু যোগ করতে হবে কাঁচা পেঁপে। কাঁচা পেঁপে মাংস সিদ্ধ হতে সাহায্য করে।
তবে অনেকেই আগে পাঁঠার মাংসকে ভালো করে সেদ্ধ করে নিয়ে রান্না করতে শুরু করেন। সেক্ষেত্রে সময় খানিকটা কম লাগে। মোটামুটি কষা হয়ে গেলে তারপরে বেশ খানিকটা জল এবং আলু দিয়ে প্রায় আধঘন্টা দমে রান্না করতে হবে। মাঝে মাঝে ঢাকা খুলে খুন্তি দিয়ে একটু নাড়িয়ে দিতে হবে। মাংস অনেকটা সেদ্ধ হয়ে এলে টক দই দিতে হবে। তারপর আরও খানিকক্ষণ ঢাকা দিয়ে মাংসকে সিদ্ধ হতে দিতে হবে। তারপরেই কড়াই থেকে গরম গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন কষা পাঁঠার মাংস।