শ্রেয়া চ্যাটার্জি – ভারতবর্ষ কৃষিভিত্তিক দেশ। তাছাড়াও গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে নদীর সংখ্যা কম নয়। কৃষির পাশাপাশি গোটা ভারতে জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে অজস্র নদী। তাইতো ভারতকে নদীমাতৃক দেশ বলা হয়। নদীর উর্বর পলি মাটিতে জমিতে চাষবাস আর পুকুরের মাছ চাষ সব মিলিয়ে একেবারে পরিপূর্ণ ভারত। তার মধ্যে চাষের ক্ষেত্রে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন ঘটিয়েছেন এই নীলকান্ত মিশ্র। আসলে অনেক ক্ষেত্রেই ভারতবর্ষের চাষীরা খরা, বন্যা, কিটের আক্রমণে জর্জরিত হয়। ২০০৬ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে কাজ করেছিলেন ঝাড়খণ্ডের নীলকান্ত মিশ্র।
তিনি দেখেছিলেন, মৎস্য চাষ হল চাষীদের অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধির একটা অসাধারণ উৎস। আর তার জন্যই তিনি ‘জলজীবিকা’ বলে একটি মৎস্য ভিত্তিক কেন্দ্র তৈরি করেন ২০১৩ সালে। এই সংস্থাটি গামের প্রত্যন্ত চাষী থেকে শুরু করে বৃহত্তর চাষী সবাইকেই মৎস্য চাষ সম্পর্কে নানান রকমের কথা জানাতে থাকে। তারা এটাও বলেন, কিভাবে মৎস্য চাষ করলে, তাদের উৎপাদন এবং লভ্যাংশের হার কিছুটা বেশি হবে। এই ‘জলজীবিকা’- তে ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্ধ্রপ্রদেশের প্রায় ১০০০ জন মৎস্য চাষীকে যুক্ত করতে পেরেছে। শুধু তাই নয়, পুরো সংস্থাটি প্রায় ২৫ হাজার মানুষকে জীবনে বেঁচে থাকার পথে একটু উন্নতির মুখ দেখাতে পেরেছে। এদের মধ্যে রয়েছে ৫০০০ জন নারী, যারা ‘সেল্ফ হেল্প গ্রুপ’- এর সঙ্গে যুক্ত।
নীলকান্ত জামশেদপুরে জন্মগ্রহণ করেছেন। জামশেদপুর শহরটি পুরোটাই ‘ইস্পাত শিল্প নগরী’ হিসেবে পরিচিত। ১৯৯৮ সালে তিনি বেনারসের ‘বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি’ থেকে অংকের উপরে গ্রাজুয়েট হন। নীলকান্ত জানান, “এই সময় আমি নানান রকম সামাজিক বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছিলাম। তাই ভেবেছিলাম নয় সাংবাদিকতার জীবন বেছে নেব, আর নাহলে উন্নয়নশীল কোন সেক্টরে চাকরি করব”। মাস্টার ডিগ্রি করার পরে তিনি জামশেদপুরে ‘ফ্রি লিগ্যাল এইড কমিটি’ তে যুক্ত হন। প্রথমে তিনি মধ্যপ্রদেশের বুন্দেলখন্ড মৎস্য চাষের উন্নতির জন্য একটি উন্নয়নশীল প্রোগ্রাম শুরু করেছিলেন। তিনি জানান, “বিভিন্ন এনজিওর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের মারফত সাধারণ মানুষকে নানান রকম ভাবে মৎস্য বিষয়ক জ্ঞান দেওয়া হয়।” তিন বছর মৎস্য চাষ নিয়ে ট্রেনিং নেওয়ার পর নীলকান্ত ভেবেছিলেন একটি সংস্থা তৈরি করা দরকার। তাই জন্য ২০১৩ সালে তিনি ‘জলজীবিকা’ তৈরি করেন। এইভাবে সাফল্য এসেছে মৎস্য চাষে। মৎস্য চাষ সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ও পর্যালোচনা করা হয়। যার ফলে চাষীরা উন্নতির মুখ দেখে এবং মৎস্য চাষে উন্নতি হয়। এরজন্য নীলকান্ত কে কুর্নিশ জানাতে হয়।