আজ জন্মদিন ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলির। ৪৮ বছরে পা দিলেন মহারাজ। একটা সময় ছিল যখন ভারতীয় ক্রিকেট দল ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো প্রতিপক্ষদের বিপক্ষে গুটিয়ে থাকতো। এই সমস্ত দেশে খেলতে গেলেই অদ্ভুত ভাবে গুটিয়ে যেত ভারতীয় ক্রিকেট দল। ২০০০ সালে ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হয়ে সেই জায়গা থেকে দলকে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে লড়াই করা শিখিয়েছিলেন তিনি।
আজ জন্মদিন মহারাজের, ক্রিকেট প্রেমীদের আদরের দাদার। ১৯৯২ সালে একদিনের ক্রিকেটে অভিষেক হলেও খারাপ পারফরম্যান্সের জন্য দল থেকে বাদ পড়েন। ঘরোয়া ক্রিকেটে বাংলার হয়ে দুরন্ত পারফর্ম করেন এরপর। সেই সুবাদে ১৯৯৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডসে তার অভিষেক হয়। অভিষেক টেস্টেই লর্ডসের মতো মাঠে তিনি সেঞ্চুরি করেন। এর পরের টেস্টেও সেঞ্চুরি করেন তিনি। পরপর দুই টেস্টে সেঞ্চুরি করে ক্রিকেটে নিজের আগমনবার্তা দেন মহারাজ। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৮৩ রানের ইনিংস খেলেন তিনি, রাহুল দ্রাবিড়ের সাথে ৩১৮ রানের পার্টনারশিপ করেন।
২০০০ সালে ভারতীয় ক্রিকেট ম্যাচ গড়াপেটার কালো ছায়ায় ঢাকা পড়ে যায়। ভারতীয় ক্রিকেটের টালমাটাল অবস্থায় দলের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় দাদার হাতে। সেই অবস্থা থেকে ভারতীয় দলের শক্ত ভিত গড়ে তোলেন সৌরভ। নিয়মিত তরুণ যোগ্য ক্রিকেটারদের সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে শক্তিশালী জাতীয় দল গড়ে তোলেন তিনি। ২০০১ সালে বিখ্যাত ইডেন টেস্টে ফলোঅনের থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে স্টিভ ওয়ার দুধর্ষ অস্ট্রেলিয়ার সাথে জেতে সৌরভের নেতৃত্বাধীন ভারত। সেই থেকে শুরু, এরপর দেশে বিদেশে একের পর এক সিরিজ জেতা শুরু করে ভারতীয় ক্রিকেট দল। চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে থাকে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশের সাথে।
ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে একের পর এক তরুণ যোগ্য ক্রিকেটারদের জাতীয় দলে সুযোগ দিতে থাকেন সৌরভ। যুবরাজ সিং, মহেন্দ্র সিং ধোনি, হরভজন সিং, গৌতম গম্ভীর, জাহির খান, আশিষ নেহরা সহ একাধিক বড় ক্রিকেটাররা সৌরভের আমলেই সুযোগ পেয়েছিল। ২০০২ সালের ন্যাটওয়েস্ট ট্রাফির ফাইনালের কথা হয়তো এমন কোনো ভারতীয় ক্রিকেট ভক্ত নেই যে জানেনা। এই ফাইনালেই সৌরভ গাঙ্গুলির বিখ্যাত লর্ডসের ব্যালকনি থেকে জার্সি ওড়ানো, ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে চিরকাল উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। তার নেতৃত্বে ২০০৩ এর বিশ্বকাপ ফাইনালে যায় ভারত ১৯৮৩ এর পর প্রথমবার। যদিও রানার্স হয়েই থাকতে হয় ভারতীয় দলকে। এর পর ২০০৪-এ পাকিস্তানের মাটিতে প্রথম টেস্ট সিরিজ জয় তারই নেতৃত্বে।
২০০৫-০৬ সালে জাতীয় দল থেকে খারাপ পারফরম্যান্সের অজুহাতে ছেঁটে ফেলা হয় তাকে। কিন্তু সেখান থেকে ২০০৭ সালে জাতীয় দলে কামব্যাক করেন তিনি। এরপর ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। ২০১২ সালে সমস্ত ধরণের ক্রিকেট থেকেই অবসর নেন সৌরভ গাঙ্গুলি। সৌরভ ভারতের হয়ে ১১৩টি টেস্ট ও ৩১১টি ওয়ানডে খেলেছেন। সব ফর্ম্যাট মিলে তিনি ১৮,৫৭৫ রান করেছেন। ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ১৯৫টি ম্যাচে তার মধ্যে ৯৭টি ম্যাচ জিতিয়েছেন।
এরপর তিনি বেঙ্গল ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি হন এবং ২০১৯ সালের অক্টোবরে তিনি বিসিসিআই এর সভাপতি হন। এক বর্ণময় জীবন, যার আমলেই ভারতীয় ক্রিকেট প্রকৃতপক্ষে প্রতিপক্ষের সাথে লড়াই করা শিখেছিল। শুভ জন্মদিন দাদা।