শ্রেয়া চ্যাটার্জি – ১৬ বছরের অনন্ত দৈবফোদে ২২ কিলোমিটার হেঁটে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে গিয়ে পড়াশোনা করেন। ঘটনাটি ঘটেছে মহারাষ্ট্রের পুনের পানশেট নামক একটি গন্ডগ্রামে। অনেকেই প্রতিদিনের এই কাহিনী শুনলে হয়তো আঁতকে উঠবেন। কিন্তু অনন্তকে প্রতিদিন এই এই সুদীর্ঘ পথ হেঁটে পড়াশোনা করতে হয়েছে। তার এই পরিশ্রম কিন্তু একেবারেই জলে যায়নি দশম শ্রেণীর পরীক্ষায় সে পেয়েছে ৮২.৮০%।
তিনি জানিয়েছেন তিনি ভোর চারটের সময় ঘুম থেকে উঠতেন, ছটা পর্যন্ত টানা পড়াশোনা করতেন। তারপর এক ঘন্টা ঘুমিয়ে স্কুলের উদ্দেশ্য বেরোতেন। প্রতিদিন গভীর রাত পর্যন্ত তিনি পড়াশোনা করতেন। তিনি জানতেন, এই বছরটা তার জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। একটা মাটির ঘরে অনন্ত তার মা, তিন ভাই বোনকে নিয়ে থাকেন। তার বাবা একটি স্থানীয় ক্যান্টিনে ওয়েটার হিসেবে কাজ করেন। বাড়িতে বৈদ্যুতিক সংযোগ নেই। দিনের বেলাও বাড়িতে অন্ধকার। তবে এতো ভালো নাম্বার করেও সে মোটেই আনন্দিত নয়, সে তার লক্ষ্যে পূরণের জন্যে ইতিমধ্যেই পরিকল্পনা করতে শুরু করে দিয়েছে। সে চায় পুনের জুনিয়র কলেজে গিয়ে ইউ.পি.এস.ই এর জন্য প্রিপারেশন নিতে। তিনি ভেবেছিলেন ৯০ শতাংশ নম্বর তিনি পাবেন, এই নম্বর পেতে হলে তাকে স্কুলের কাছাকাছি কোন হোস্টেলে থাকতে হতো কিন্তু তার সামর্থ্য ছিল না অতটা টাকা দিয়ে হোস্টেলে থাকার। তাইতো কি প্রতিদিন চার ঘণ্টা হেঁটে স্কুলে যাতায়াত করতে হতো।
এই পরিবারটি পুনে শহর থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে ভেলহা তেহেসিলের ভারঘাদ গ্রামে অবস্থিত। পাহাড়ে এই জায়গাটি কঙ্কন উপকূল বর্তী জায়গায় অবস্থিত। এই গ্রামে কমপক্ষে ১০০ জনের বাস, তার মধ্যে ৫০ জন হলেন স্থায়ী বাসিন্দা বাদবাকি সকলেই পরিযায়ী মানুষের দল। এই গ্রামের মধ্যে একটি জেলা পরিষদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রয়েছে সেখানে সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করা যায়, এখান থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে পানশেটে রয়েছে বিদ্যালয় রয়েছে যেখানে অষ্টম শ্রেণি – দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা যায়। তার বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য তার গ্রাম থেকে একটি বাস ছাড়লেও, বাসের সময় ঠিক ঠাক না হওয়ার জন্য সেই বাসে করে বিদ্যালয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
আর প্রতিদিন তাদের পক্ষে বাস ভাড়া দেওয়া সম্ভব হয় না। অগত্যা পায়ে হেঁটে বিদ্যালয়ের পথে এগোতে হয়। বাসে চড়ার জন্য প্রতি মাসে ৬৬০ টাকা করে ছেলেদের জন্য পাস থাকে যেখানে মেয়েদের জন্য এটি মাত্র ৩০ টাকা। কোনো কোনো দিন যখন ছেলে মেয়েদের হাতে টাকা থাকে তখন সেখানে বাস দাঁড়ায় এবং সেদিনই একমাত্র বাসে করে যাওয়ার সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়। এখানকার বাস ডিপোর ম্যানেজার জানিয়েছেন, কম লোকজনের জন্যই এখানে বাস চলাচল এত কম করে। অনন্তর শিক্ষক-শিক্ষিকারা দাবি করেছেন, সে পরবর্তীকালে এক অসাধারণ ছাত্র তে পরিণত হবে।