অফবিটদেশনিউজপলিটিক্স

মেয়েরা পণ্য নয় সম্মান!…

Advertisement

সালটা 2020। যেখানে মহাকাশে পাড়ি দিতে সক্ষম একজন নারী। মন্ত্রিত্ব সামলে উঠতে সক্ষম একজন নারী। দেশ চালাতে সক্ষম একজন নারী। যুদ্ধবিমান চালাতে সক্ষম একজন নারী। কিন্তু তবুও অস্তিত্ব বিপন্ন হয় বা হচ্ছে সেই একজন নারীরই। নির্ভায়া কান্ড হোক বা হাথরস কান্ড, সবক্ষেত্রে অস্তিত্ব খোয়াতে হচ্ছে একজন নারীকেই। এটা কি শুধুই একজন পুরুষের কামনা-বাসনার প্রকাশ? নাকি পুরুষরা মেয়েদের তাদের কামনা-বাসনা চরিতার্থ করার একটা জাস্ট ‘আইটেম’ ভেবে রেখেছে।

কোনও মেয়ে ধর্ষিতা হলে অনেক সময় তাবড় তাবড় নামজাদা পুরুষদের কাছ থেকে শুনতে হয় ছোট পোশাক পড়ে মেয়েরাই নাকি পুরুষদের উত্ত্যক্ত করে। আচ্ছা গোয়ার বিচ হোক বা ব্যাংকক-পাটায়ার সমুদ্র সৈকত, সেখানে তো একজন পুরুষকেও শুধুমাত্র অন্তর্বাস পড়ে জলে সময় কাটাতে দেখা যায়। কই তখন তো কোনও নারী সেভাবে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে না। তাও যদি তর্কের খাতিরে ধরে নিই, পুরুষদের উত্ত্যক্ত হওয়ার পেছনে মেয়েদের ছোট পোশাক পরা একটা কারণ, তাহলে এগারো মাসের একটা শিশু ঠিক কীভাবে একটা পুরুষকে উত্ত্যক্ত করতে পারে বলতে পারেন? আপনি সেক্ষেত্রে কোন যুক্তি খাড়া করবেন?

যদি শুধু মেয়েদের ছোট পোশাক পরাটাই দেশে 16 মিনিট অন্তর একটা ধর্ষণের ঘটনা ঘটার কারণ হয়ে থাকে, তাহলে একটা এগারো মাসের শিশুর যৌনাঙ্গ কীভাবে রক্তে ভেসে যায়? এই প্রশ্ন যখন করা হয় বা যখন ওঠে, তখন কিন্তু কোনও উত্তর পাওয়া যায় না একটা পুরুষের কাছ থেকে। আচ্ছা যদি ছোট পোশাক পরাটা একটা ছেলেকে উত্ত্যক্ত করার কারণ হয় বা সেটা ধর্ষণের কারণ হয়, তাহলে বাবার হাতে মেয়ে ধর্ষিতার ঘটনা ঠিক কোন যুক্তিতে ঘটে বলতে পারেন?

নির্ভয়া কাণ্ডের মেয়েটি তো বাসে উঠে ছোট পোশাক পরে ছেলেগুলোকে উত্ত্যক্ত করেনি সেদিন। সে তো তাঁর বাগদত্তার সঙ্গে বাড়ি ফিরছিল। সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেডিকেল ছাত্রী বোধ হয় সেদিন ছোট পোশাক পরে বাসের ওই ছেলেগুলোকে উত্ত্যক্ত করেনি। তাহলে সেদিন নির্ভয়া কান্ড ঘটেছিল কেন বলুন তো? হাথরসের নির্যাতিতা তরুণী মাঠে কাজ করছিল দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাড় করার জন্য। সে তো ছোট পোশাক পরে ওই দুষ্কৃতীগুলোকে উত্ত্যক্ত করেনি। তাহলে তাঁকে কেন ওই অসভ্য, বর্বরোচিত পুরুষগুলোর লালসার শিকার হতে হয়েছিল বলতে পারেন?

আসলে কি বলুন তো? ছোট পোশাক পরাটা কোনও ফ্যাক্টর নয়। ছোট পোশাক পরলে ছেলেরা উত্ত্যক্ত হয়, এই যুক্তিটা জাস্ট পিঠ বাঁচানো একটা যুক্তি। আসলে যুগ যুগ ধরে ছেলেরা মেয়েদেরকে একটা পণ্য ভেবে এসেছে। কখনও পণ্য ভেবে মেয়েদের ধর্ষণ করা, তো কখনও পঁ চেয়ে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়। কখনও আবার অত্যাচারের মাত্রা এত বাড়ানো হয় যে, আত্মহত্যার দিকে প্ররোচনা দেওয়া হয়। আমরা যতই বলি, আধুনিক সমাজে মেয়ে-পুরুষ সমান সমান। তালে তাল মিলিয়ে মেয়েরা পাল্লা দিয়ে পুরুষের সঙ্গে চলছে, তবুও পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের মানসিক চিন্তা-ভাবনাটা আজও আপগ্রেড হয়নি। হলে মেয়েরা একটা পুরুষের কাছে পণ্য না হয়ে সম্মান হয়ে উঠত।

কথায় বলে একটা শিশুর মধ্যে ভগবান বাস করে। আর সেই শিশু যদি হয় কন্যা সন্তান, তাহলে তার মধ্যে মা লক্ষ্মী বিরাজ করে। কিন্তু এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে সব সময় সে কথাটা মান্যতা দেওয়া হয় না কেন? হলে কন্যা ভ্রুণ হত্যা হত না। আবার মান্যতা দেওয়া হলে কোনও এক নিষ্পাপ কন্যা সন্তানের যৌনাঙ্গ রক্তে ভেসে যেত না। এই সব পুরুষ এইরকম মেয়েদেরকে প্রোডাক্ট হিসেবে ব্যবহার করছে বা করে, তারাও তো একটা মেয়ের নারী ছিড়েই এই ধরণীতে এসেছে। তাহলে এত আধুনিকতার পরেও দেশে 16 মিনিট অন্তর একটা ধর্ষণের ঘটনা ঘটার পরিসংখ্যান কী করে তৈরি হয়? কী করে প্রতি দু’ঘণ্টা অন্তর একটা মেয়ে পাচার হয়ে যায়? কী করে প্রতি 4 মিনিট অন্তর একটা মেয়েকে পণের দাবিতে পুড়িয়ে মারা হয়?

মেয়েরা নাকি মা দুর্গার রূপ। তাহলে সেই মা দুর্গার অস্তিত্বে যখন প্রশ্ন ওঠে বা অস্তিত্ব হননের যখন প্রবণতা দেখা দেয়, তখন কেন খরগো হাতে আমরা সেই অশুররূপী পুরুষদের নিধন করতে পারছি না? কেন ধর্ষণের বিচার পেতে গেলে বছরের-পর-বছর হন্যে দিয়ে আদালতের দিকে তাকিয়ে বসে থাকতে হয় সেই ধর্ষিতার পরিবারকে? এ কোন বিচারব্যবস্থা, যেখানে মেয়েদের সম্মান নষ্ট হওয়ার পর বছরের পর বছর কেটে গেলেও ঘুম ভাঙে না কারোর? ধর্ষণকারী নাবালক হলে তাকে জুভেনাইল আইনের বেড়াজালে ফেলে বেকসুর খালাস করে দেওয়া যায়। কিন্তু একটা কথা বলুন তো, নাবালকের অপরাধটা তো আর নাবালকের মতো নয়। সেটা যথেষ্ট সাবালক। তাহলে শাস্তিটা কেন নাবালকের মতো দেয় এই দেশের বিচারব্যবস্থা? জানি, আমার এই বিশেষ লেখার মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো আমি আমাদের সমাজে তুলে ধরলাম, তার কোনও উত্তর কারোর কাছেই নেই। হয়তো আমার কাছেও নেই। শুধু এই প্রশ্নগুলো তুলে যারা মুখেই বলে নারী-পুরুষ এখন সমান সমান, অথচ মনে মনে একটা মেয়েকে পায়ের তলায় পিষে মেরে ফেলার আগে দু’বার ভাবে না, তাদের কাছে এই প্রশ্নগুলো কার্যত চপেটাঘাত বা থাপ্পর হয়ে ধাক্কা মারবে বলেই আমি আশা করছি।

সবশেষে একটা কথাই বলব, সময় এসে গেছে ঘুরে দাঁড়ানোর। সময় এসে গেছে এই পুরুষগুলোকে নিধন করার। সময় এসে গেছে সমাজের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার যে, মেয়েরা পণ্য নয়, মেরা সম্মান। আর এই সম্মান দিনের পর দিন ভূলুণ্ঠিত হলে একদিন এই ধরণী ফাঁক হয়ে যাবে। তাই ঘুরে দাঁড়াও নারী। বল আমরা নারী। আমরা একাই একশো। আমরা পারি। তবেই শায়েস্তা হবে এই অশুররূপী পুরুষগুলো। যাদের নিধন করার এটাই মোক্ষম সময়।

Related Articles

Back to top button