টাকি: দুর্গোৎসবকে ঘিরে এই রাজ্য যেমন মেতে ওঠে, ঠিক তেমনই মা দুর্গার বিসর্জনকে ঘিরে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ অন্য আর এক উৎসবে মেতে ওঠে। ইছামতীর তীরে দুই বাংলার এই বিসর্জনকে ঘিরে মানুষের মধ্যে কম উৎসাহ থাকে না। অনেকেই দুই বাংলার এই বিসর্জন পর্ব দেখতে দু’দিন আগে থেকেই টাকির আশেপাশের হোটেলে নিজের জায়গা করে নেয়। কিন্তু এবার ইছামতীর তীরে ফিকে জাঁকজমক। প্রতিবারের মতো ভিড় চোখেই পড়েনি, জৌলুস ছিল না। হৈহৈ তো দূরের কথা।
করোনার প্রভাব দুই বাংলার এই প্রাণের উৎসবেও পড়েছে। তবে বিসর্জন হয়েছে। কিন্তু সবটাই সাদামাটাভাবে। সামাজিক দূরত্ববিধি এবং করোনা বিধি মেনে। দুই বাংলার মাতৃ প্রতিমা এদিন ইছামতীর তীরে নিরঞ্জন করা হয়। এদিন টাকিতে ব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখেন বসিরহাটের তৃণমূল বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাস। বাংলার প্রাণের পুজোর অনন্য এক মেলবন্ধনের দৃশ্যের সাক্ষী এই ইছামতীর তট। প্রত্যেক বছর একেবারে সাবেকি রীতি মেনে একই সঙ্গে দুই বাংলার প্রতিমা বিসর্জন হয় এই ঘাটে।
ইছামতী জানে, কাঁটাতারের দুপাশের এই জনবসতির আত্মিক যোগ, উত্সবের বন্ধন কতটা গভীর, কতটা নিবিড়। এই ইছামতীর জলে দুদেশের মানুষ প্রতিমা বিসর্জন দেয়। এই উৎসবকে ঘিরে ইছামতী নদীর বুকে যে দুই দেশের কাঁটাতার রয়েছে, তা মনেই হয় না। বিসর্জন পর্বে প্রত্যেক বছর আলাপচারিতায় মাতে দুই বাংলার সীমান্তে থাকা মানুষজন। একে অপরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ঘটে। একই ভাষায়, একই বিশ্বাসে দুদেশের মানুষ করজোড়ে প্রার্থনা করে, ‘আসছে বছর আবার এসো মা।’
কিন্তু মারণরোগ করোনা আবহে ইছামতীর রোশনাই এবার ফিকে হয়ে গিয়েছে। টাকির জমিদারবাড়ির প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে সোমবার সকালেই। রেওয়াজ মেনে কাঁধে চড়ে কৈলাস পাড়ি দিয়েছেন দেবী। বিধি-নিষেধ মেনেই হয়েছে সব। তবে বিকেল নামতেই সবটাই কেমন যেন ফাঁকা, কেমন যেন অস্বাভাবিক। এবার পাশাপাশি দু’দেশের দুই নৌকোয় বিসর্জন হয়নি। বরং মাঝনদীতে নৌকা বেঁধে ব্যারিকেড করেছে বিএসএফ।
একটিমাত্র নৌকা ভেসেছে ইছামতীতে। তারপর সব ঠাকুরের ভাসান হয়েছে পাড় ঘেঁষে। প্রত্যেক বছর যেখানে তিলধারণের জায়গা থাকে না, এবার সেই ঘাট বেশ খালি। অসুখে ত্রস্ত বাপের বাড়ি ছেড়ে কৈলাস ফিরেছে উমা। জৌলুসে ভাঁটা পড়েছে ঠিকই, তবে আবেগ আর নিষ্ঠা একইভাবে অটুট। তাই বিসর্জন ফিকে হলেও সকলের একটাই প্রার্থনা ছিল এদিন। আর সেটি হল, করোনা মুছে গিয়ে যেন আগামী বছর একইভাবে উৎসব ফিরে আসে ইছামতির তীরে।