সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের প্রকোপে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। স্কুল,কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি সমস্ত শিক্ষাঙ্গন গত ৬ মাস ধরে বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে তাহলে কি করে স্কুল মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষাগুলি নেবে। প্রত্যেক বছরেই দুর্গাপুজো ও কালীপুজো কাটালেই ছাত্র-ছাত্রীরা টেস্ট পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। এই অবস্থায় পরীক্ষা হবে কি হবে না সে নিয়েই গভীর সংশয়ে আছে ছাত্র-ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকরা, এমনকি স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারাও।
টেস্ট পরীক্ষা ছাড়াও আসল মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক হবে নাকি সে নিয়েও চরম অনিশ্চয়তা আছে। আর পরীক্ষা হলেও পাঠক্রম বা সিলেবাস কি থাকবে সেটাও জানেনা কেউ। দীর্ঘদিন লকডাউনে অনলাইনে ক্লাস করে স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা পাঠক্রম শেষ করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু গ্রামেগঞ্জে যেখানে ইন্টারনেট পরিষেবা দুর্বল বা যে ছাত্র-ছাত্রীর কাছে স্মার্টফোন নেই তাদের পড়াশোনা করে ওঠা হয়নি। তারা নিজেরাই হয়তো বাড়িতে কিছুটা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষাদপ্তর আদেও সিলেবাস কমাবে নাকি তা কারোরই জানা নেই।
শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ জানাচ্ছে, সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছে গ্রামগঞ্জ ও মফস্বলের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দিরবাজার-ঝাঁপবেড়িয়া হাইস্কুলের এক শিক্ষক বলেছেন, টেস্ট যদি না হয়, তা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ বা উচ্চ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে অবিলম্বে সেটা জানিয়ে দেওয়া উচিত। অন্যদিকে, পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর ব্লকের ঘোষডিহা হাইস্কুলের এক শিক্ষক জানান, গ্রামের দিকে ইন্টারনেট পরিষেবা দুর্বল হয় অনেক ছাত্র-ছাত্রী ক্লাস করতে পারেনি। তারা বাড়িতে বসে নিজেদের মত প্রস্তুতি নিচ্ছে। শিক্ষাদপ্তর অবিলম্বে কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ঘোষণা করলে ছাত্রছাত্রীরা সত্যিই বিপদের সম্মুখীন হবে।
অন্যদিকে, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় কিছু দিন আগে জানিয়েছেন, এই করোনা পরিস্থিতিতে মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা কি করে হবে বা পাঠক্রম কি থাকবে তা নির্ধারন করার ব্যাপারটা খতিয়ে দেখছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও উচ্চ মাধ্যমিক সংসদ। কিন্তু এতে অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন, এখনো যদি পরীক্ষা কবে হবে বা কি সিলেবাস হবে তা না জানানো হয়, তাহলে ছাত্র-ছাত্রীরা পরীক্ষার প্রস্তুতি কি করে নেবে।
গ্রামের তুলনায় শহরের দিকের স্কুলগুলিতে অনলাইন ক্লাস মোটামুটি ঠিক মতো হলেও পড়ুয়া ও অভিভাবকদের উদ্বিগ্নতা কিছু কম নয়। তারাও কীভাবে পরীক্ষা হবে ভেবে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। কলকাতার নামকরা হিন্দু স্কুলের এক শিক্ষক জানিয়েছেন, “রাস্তাঘাটে দেখা হলে বা ফোনে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের একটাই প্রশ্ন, পরীক্ষা আদৌ হবে তো বা কতটা সিলেবাসের হবে।”