কলকাতা: দীপান্বিতা অমাবস্যায় বিভিন্ন সতীপীঠ বিভিন্ন রূপে মা পূজিতা হন। সেইসব জায়গায় ভক্তের সমাগম চোখে পড়ে। তবে এ বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে দক্ষিনেশ্বর থেকে কালীঘাট হোক বা ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি থেকে টালিগঞ্জের করুণাময়ী মন্দির, সবেতেই ভক্ত সমাগম অল্প মাত্রায় চোখে পড়েছে। তবে ভক্তের ঢল না নামলেও একইভাবে আচার-রীতি মেনে সব জায়গায় মায়ের আরাধনা হয়েছে। দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাটের মতো অন্যান্য কালী মন্দিরের পেছনেই রয়েছে কোনও না কোনও কাহিনি। এমনই একটি মন্দির হল দক্ষিণ কলকাতার টালিগঞ্জে অবস্থিত করুণাময়ী কালীমন্দির। আর এই মন্দির প্রতিষ্ঠার পেছনে লুকিয়ে আছে কন্যা বিয়োগের মর্মস্পর্শী কাহিনি।
কথিত আছে, বড়িশার বাসিন্দা নন্দদুলাল রায়চৌধুরী তাঁর একমাত্র কন্যা করুণাময়ীর অকাল মৃত্যু হলে শোকে কাতর হয়ে পড়েন। সেই সময় একদিন করুণাময়ী তাঁকে স্বপ্নাদেশে একটি কষ্টিপাথর দেখিয়ে বলেছিলেন, ‘এই কষ্টিপাথরেই আমি তোমার কাছে থাকব।’
এরপরই ১৭৬০ সালে টালিগঞ্জে আদি গঙ্গার পশ্চিম পাড়ে মন্দির তৈরি করে, সেখানে কষ্টিপাথর দিয়ে তৈরি কালীমূর্তির প্রতিষ্ঠা করেন নন্দদুলাল রায়চৌধুরী। মেয়ের নামে প্রতিমারও নাম তিনি রাখেন ‘মা করুণাময়ী।’
তাই এখানে মা করুণাময়ী কুমারী রূপে পূজিত হন। এমনকি কালীপুজোর দিন এখানে কুমারী পুজো হয়। বেনারসি শাড়ি ও গয়নায় সাজানো হয় মাকে। এর পাশাপাশি এদিন খিচুড়ি, পোলাও, তরকারি, লুচি, ছোলার ডাল, পায়েস, চাটনির সঙ্গে ১০ রকমের মাছের পদ রান্না করে ভোগ হিসাবে দেওয়া হয় প্রতিমাকে। যখন মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল তখন থেকে বলি প্রথার চল ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। সুতরাং, টালিগঞ্জের যেই করুনাময়ী মন্দিরে ভক্তরা ভিড় জমায়, সেই মন্দির প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছে এমন এক মর্মস্পর্শী কাহিনি।