করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘ লকডাউন দেশকে তার অভাবী মুখ দেখিয়েছে। সমগ্র দেশে শুরু হয়েছে পেশা বদলে যাওয়ার হিড়িক। এর মধ্যেই শিল্পীরা অনেকেই নিজেদের তৈরি শিল্প নিয়ে নেমে এসেছেন ফুটপাতে, দুমুঠো অন্ন রোজগারের আশায়। এরকম একজন শিল্পী হলেন সুনীল পাল। আশি বছর বয়স্ক শিল্পী সুনীল পাল প্রতি বুধবার ও শনিবার দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়াহাট-গোলপার্কের মোড়ে অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের এটিএম-এর সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন নিজের আঁকা ছবির পসরা নিয়ে। হাসিমুখে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর হয়তো বিক্রি হয় একটি কি দুটি ছবি।। মাত্র 50 টাকা বা 100 টাকার বিনিময়ে নিজের তুলিতে তিল তিল করে ফুটিয়ে তোলা শিল্পকর্ম বিক্রি করে পেট চালান সুনীল পাল।
সুনীলবাবুর সন্তান কবেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন তাঁর দিক থেকে। প্রায় কঙ্কালসার শরীরে, ছেঁড়া পোশাকে রোজগারের তাগিদে মহানগরীর ফুটপাতে নেমে আসতে হয়েছে বৃদ্ধ শিল্পীকে। তবু মুছে যায়নি তাঁর মুখের হাসি, থেমে যায়নি তাঁর অদম্য প্রাণশক্তি। গত 7 নভেম্বর টুইটারে আরিফ শাহ নামে এক জনৈক ব্যক্তি সুনীলবাবুর ছবি পোস্ট করে তাঁর লড়াইয়ের কথা জানিয়ে সুনীলবাবুর কাছ থেকে সবাইকে ছবি কেনার জন্য অনুরোধ করেন। আরিফ বলেন, সুনীলবাবুর সন্তানরা এই বৃদ্ধ বয়সে তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। নিজের আঁকা ছবিগুলি বেচতে সুনীলবাবুর যথেষ্ট সমস্যা হয়। সবাই যদি সুনীলবাবুর সাহায্যার্থে এগিয়ে এসে তাঁর ছবিগুলি কেনেন, তাহলে তাঁর অর্থ উপার্জনের ব্যবস্থা হয়।
আরিফের এই আবেদনে সাড়া দিয়ে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন সুনীলবাবুকে সাহায্য করার জন্য। কেউ কেউ সুনীলবাবুকে স্মার্টফোন কিনে দিতে চেয়েছেন যাতে সুনীলবাবু অনলাইনে নিজের ছবিগুলি বিক্রি করতে পারেন। তাঁকে যাতে আর ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে না থাকতে হয় এবং তিনি যাতে ছবিগুলি অনলাইনে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতে পারেন তার জন্য অনেকেই সুনীলবাবুকে অনলাইন স্টোর খুলে দেবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়া, অনলাইন পোর্টাল জন্মলগ্ন থেকেই গসিপ নিউজ পরিবেশন করার দোষে দুষ্ট। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর করোনা পরবর্তী ভার্চুয়াল পৃথিবী অনেক বদলে গেছে। আজ শুধু গসিপ নয়, গেম নয়, দিনের শেষে সোশ্যাল মিডিয়া এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল ভাইরাল করে দেয় একজন আশি বছরের শিল্পীকে, ভার্চুয়ালি পাশে দাঁড়িয়ে চেষ্টা করে সুনীল পালের মতো মানুষদের ভালো রাখতে।