কলকাতা: দুর্গাপুজো, কালীপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো বা ছট পুজোয় জমায়েতের অনুমতি দেয়নি কলকাতা হাইকোর্ট। দেশে ধীরে ধীরে সংক্রমণ কমলেও এমন খুব শীঘ্রই টিকাকরণ শুরু হলেও পরিস্থিতি এখনও যথেষ্ট উদ্বেগের। এই আবহে গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে চিন্তিত ছিল কলকাতা হাইকোর্ট। তবে মকর সংক্রান্তির পুণ্যস্নানের আগে দূর হল যাবতীয় দ্বিধা-দ্বন্দ্ব। শর্তসাপেক্ষে গঙ্গাসাগর মেলা করার অনুমতি দিল কলকাতা হাইকোর্ট। তাই বাধা রইলো না স্নানেও। যদিও এদিনের নির্দেশে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ ই-স্নারের উপরেই বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছে রাজ্য সরকারকে।
বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত মকর সংক্রান্তির পূণ্যস্নান। করোনা আবহে এবার গঙ্গাসাগরে পুণ্যার্থীদের ভিড় অন্যান্য বারের তুলনায় অনেকটাই কম। তার মধ্যেই করোনা পরিস্থিতিতে গঙ্গাসাগর মেলায় ভিড় নিয়ন্ত্রণের আর্জি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হয়েছিল জনস্বার্থ মামলা। করোনা পরিস্থিতিতে এত জনসমাগম নিয়ে মেলা করা যায় কিনা তা নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতামত চেয়েছিল আদালত। গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে রাজ্যের পেশ করা বক্তব্যে যে তারা সন্তুষ্ট না তাও জানিয়েছিল হাইকোর্ট। এই নিয়ে গত ৭ তারিখের শুনানিতে প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা নিয়েই তারা বেশি চিন্তিত তাও জানিয়ে দিয়েছিল আদালত।
করোনা মানুষের মুখ-নাক থেকে বের হওয়া ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়ায়। অনেক মানুষ একসঙ্গে স্নান করতে নামলে নাক-মুখ থেকে নিঃসৃত তরল সহজেই জলে মিশে যাবে, এবং একটা বড় অংশের মানুষকে সংক্রমিত করতে পারে। তাই এটা নিয়ে সবথেকে বেশি চিন্তিত হাইকোর্ট, প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে জানিয়েছিলেন দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। তাছাড়াও বাতাসেও ড্রপলেট ছড়াতে পারে। ডিভিশন বেঞ্চের আরও মত, পুলিশি বন্দোবস্ত নিয়ে চিন্তিত নয় আদালত। কিন্তু প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিয়ে চিন্তিত। এর পরে হলফনামা জমা দেয় রাজ্য। জানান হয় ই-স্নানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে পুণ্যার্থীদের জন্য। নদী থেকে দূরে স্নানের ব্যবস্থা করা হয়েছে, হাইকোর্টে জানান রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল। এরপর মঙ্গলবার বিকেল চারটে নাগাদ মেলার অনুমতি দেয় আদালত। হাইকোর্ট সাগরে মকর স্নানে সরাসরি নিষেধাজ্ঞা জারি না করলেও পুণ্যার্থীরা যাতে জলে নেমে স্নান না করেন, সে ব্যাপারে তাদের উৎসাহিত করতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে । এই পরিপেক্ষিতেই রাজ্যের তৈরি করা ই-স্নান প্রকল্পের জল মেলা মাঠে বিনা পয়সায় বিলিরও পরামর্শ দিয়েছে হাইকোর্ট।
এদিকে করোনা আবহে ঘরে বসে যাতে মেলায় অংশ নেওয়া যায় সেদিকে নজর দিয়েই এবার ই-স্নান ও ই-দর্শনের ব্যবস্থা করেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন। মেলায় তীর্থযাত্রীদের সংখ্যা যত কমেছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ই-স্নানের অর্ডার। জেলা প্রশাসনের তরফে ই-স্নানের একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে। সেই সাইটে অর্ডার করলেই মাত্র দেড়শো টাকায় বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছে সাগরের জল, প্রসাদ-সহ নানান সামগ্রী। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই কয়েক লক্ষ মানুষ ই-স্নানের অর্ডার করেছেন। অনলাইনে অর্ডার করার পাশাপাশি একাধিক জায়গায় খোলা হয়েছে ই-স্নানের কাউন্টার। এরমধ্যে বাবুঘাটে পাঁচটি, সাগর মেলা প্রাঙ্গণে পাঁচটি এবং লট নম্বর ৮-এ দু’টি ই-স্নানের কাউন্টার রয়েছে। গঙ্গাসাগর মেলার সঙ্গে মানুষের ভাবাবেগ জড়িত। তাই মেলা পুরোপুরি বন্ধ হোক চাইছিলেন না খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। পরিস্থিতির প্রয়োজনে ছোট করেই মেলার পক্ষপাতী ছিলেন তিনি। বাবুঘাটের গঙ্গাসাগর মেলার শিবিরে এমন কথাই বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অবশেষে মেলা বন্ধ করল না হাইকোর্টও। ই-স্নানের উপর ভরসা রেখেই শর্তসাপেক্ষে মেলার অনুমতি দিল কলকাতা হাইকোর্ট।