Today Trending Newsকলকাতানিউজপলিটিক্সরাজ্য

অভিষেকের শ্যালিকার পর এবার স্ত্রী, আগামিকাল জেরা করবে সিবিআই

Advertisement

কলকাতা: রবিবার (Sunday) তৃণমূল (YMC) সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নোটিস দিয়ে তদন্তের জন্য দেখা করতে যায় সিবিআই (CBI)। পরে রুজিরা সোমবার (Monday) সিবিআইকে মেল করে বলেন, আগামিকাল, মঙ্গলবার (Tuesday) বেলা ১১টা থেকে বেলা ৩টের মধ্যে সিবিআইয়ের তদন্তকারী দল তাঁর বাড়িতে এসে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারে। সঙ্গে আরও লিখেছেন কি কারনে সিবিআই তার সাথে দেখা করতে চাইছে, তা তিনি বুঝতে পারছেন না। তবে তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে দেখা করতে প্রস্তুত তিনি। অভিষেকের স্ত্রী লিখেছেন, রবিবার যখন তার সঙ্গে সিবিআইয়ের অফিসাররা দেখা করতে এসেছিলেন, তখন বাড়িতে ছিলেন না তিনি। তবে তদন্তের জন্য মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে ৩টের মধ্যে তার বাড়িতে এসে দেখা করতে পারেন তদন্তকারীরা।

এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের শাসক অভিষেক রবিবার টুইট করে জানিয়েছেন, তাকে ভয় দেখিয়ে কিছু করা যাবে না, মাথা নতও করানো যাবে না। তবে তারা তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে সব রকম সহায়তা করতে রাজি, আইনের অনুশাসন এর উপর তাদের সম্পূর্ণ আস্থা আছে।

রুজিরার জবাবী চিঠিতে, এ ঘটনা কৌতুহলজনকভাবে মোড় নিল। গোটা রাজ্য এবং রাজনৈতিক মহল সকলেই অপেক্ষায় মঙ্গলবার দুপুরের। উল্লেখ্য, সিবিআই কয়লা কাণ্ড নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অভিষেকের স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায় নারুলাকে নোটিস দেয় রবিবার। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার একটি দল হরিশ মুখার্জি স্ট্রিটের অভিষেকের বাড়ি ‘শান্তিনিকেতনে’ যায় রুজিরাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। ঘটনাচক্রে সিবিআই ওই নোটিশ দেওয়ার ৪৮ ঘণ্টা আগেই অভিষেকের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত সাহার বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি মামলার সমন জারি করে বিধাননগরের বিশেষ আদালত, যেখানে তাকে সোমবার ডেকে পাঠানো হয়। করেছে বিধাননগরের বিশেষ আদালত। যেখানে তাঁকে সোমবার ওই আদালতে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। বিজেপি তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতিতে জড়িত থাকার যে অভিযোগ তুলছে, তার প্রমাণও দাবি করেছিলেন অভিষেক। গত শুক্রবার অমিতকে ওই প্রমাণের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন, ‘‘প্রমাণ আমি দেব না। দেবে তদন্তকারী সংস্থা। তখন যেন দিদি সেটাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রতিহিংসাপরায়ণতা না বলেন। কাকতালীয়ভাবে এই ঘটনা ঘটার ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই রুজিরার কাছে পৌঁছায় সিবিআইয়ের নোটিস। প্রত্যাশিত ভাবেই এর মধ্যে ‘রাজনীতি‌’ দেখতে পাচ্ছে তৃণমূল। কারও নাম না করলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবারই বলেছেন, ‘‘দিল্লির কোনও কোনও নেতা বলছে বাংলার মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে। আমরা ধমকানি-চমকানিতে ভয় পাই না। ভয় পাওয়ার কারণও নেই।’’

কয়লাকাণ্ডে অভিষেকের স্ত্রী-এর ব্যাংক একাউন্টে সন্দেহজনকভাবে আর্থিক লেনদেন করা হয়েছে বলে দাবি সিবিআই এর। তদন্ত করতে গিয়ে লেনদেনের হদিসও পেয়েছে তদন্তকারীরা এবং এর জন্যই রুজিরার বয়ান সংগ্রহ করতে চায় তারা অভিষেকের বাড়িতেই, নিজাম প্যালেসে নয়। একটি মহলের দাবি, রুজিরাকে সাক্ষী হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় তদন্তকারীরা এবং এর জন্য ফৌজদারি আইনে ১৬০ ধারায় নোটিসও দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায় সিবিআই। সিবিআই এর এই নোটিসের পর রবিবার বিকেলে অভিষেক টুইটারে লেখেন, দুপুর ২টোয় সিবিআই আমার স্ত্রী-র নামে একটি নোটিস দিয়েছে। আইনের অনুশাসনের উপর আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। ওরা যদি মনে করে যে, এ ধরনের পরিকল্পনা করে আমাদের দাবিয়ে রাখা যাবে, তবে ভুল ভাবছে। আমাদের এ ভাবে নত করানো যাবে না’।

কয়লাপাচার-কাণ্ডে ইতিমধ্যেই একাধিক ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। ওই কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত অনুপ মাঝি ওরফে লালার সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত হয়। গোয়েন্দাদের দাবি, ওই তদন্ত করার সময় রুজিরায় অ্যাকাউন্টে লেনদেন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এর পরেই তদন্তকারীরা অভিষেকের স্ত্রী-কে ‘সাক্ষী’ হিসাবে প্রশ্ন করতে চান বলে জানা গিয়েছে।

রবিবার দুপুরে যখন সিবিআইয়ের পাঁচ আধিকারিক অভিষেকের বাড়িতে পৌঁছায় তখন তিনি বা পরিবারের অন্য কোনও সদস্য বাড়িতে ছিলেন না। ফলে সিবিআই আধিকারিকরা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য মোবাইল নম্বর দিয়ে ২টো ২০ মিনিট নাগাদ ফিরে যান। ওই নম্বরেই রুজিরাকে যোগাযোগ করতে নির্দেশ দিয়েছিল সিবিআই। রুজিরা ফোনে যোগাযোগ করেছিলেন কি না তা জানা যায়নি, কিন্তু সোমবার সকালে তিনি লিখিত ভাবেই সিবিআইকে জবাব দিয়েছেন।

ঘটনাচক্রে, অভিষেকের বিরুদ্ধে আক্রমণ করে সম্প্রতি একটি জনসভায় বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছিলেন, ‘‘বেআইনি কয়লাপাচার চক্রের অন্যতম পাণ্ডা লালা ওরফে অনুপ মাঝি ‘ম্যাডাম নারুলা’-র অ্যাকাউন্টে নিয়মিত টাকা জমা করেন।’’ তাঁর আরও অভিযোগ ছিল, ‘‘তাইল্যান্ডের ব্যাঙ্ককে কাসিকর্ন ব্যাঙ্কের ওই অ্যাকাউন্টে প্রতিদিন নাকি দে়ড় লক্ষ তাই মুদ্রা জমা পড়ে।’’ উল্লেখ্য, অভিষেকের সঙ্গে বিবাহের আগে রুজিরা পদবি ছিল ‘নারুলা’। রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি-র অনেক নেতাই অভিষেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগ তুলছেন। তা নিয়ে আইনি পদক্ষেপও করেছেন অভিষেক। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে ফাঁসিতে যেতেও রাজি আছেন। তবে বিধানসভা নির্বাচনের আগে সিবিআইয়ের এই নোটিসের ঘটনাকে ‘রাজনীতির ষড়যন্ত্র’ বলে মনে করছেন অনেকেই।

Related Articles

Back to top button