বিধায়ক পদ ছাড়ার ব্যাপারে সম্পূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবে দল, সাফ জানিয়ে দিলেন মুকুল
অন্যদিকে শুভেন্দু অধিকারী তর্জন গর্জন করে চলেছেন, যে তিনি আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকর করেই ছাড়বেন
বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন কিছুদিন আগেই কিন্তু এখনও পর্যন্ত কৃষ্ণনগর উত্তর আসনের বিধায়ক পদ ছাড়তে পারেননি মুকুল রায়। এবারের বিধানসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগর উত্তর আসন থেকে কৌশানী মুখোপাধ্যায়কে পরাজিত করে বিজেপির টিকিটে বিধায়ক হয়েছিলেন মুকুল রায়। বহুদিন পরে ভোটের ময়দানে নেমে প্রথমেই সফল। কিন্তু তার পরেই স-পুত্র যোগ দিলেন তৃণমূলে। তারপরই প্রশ্ন ওঠে, কৃষ্ণনগর উত্তর আসনের বিধায়ক পদ কি মুকুল রায় ছেড়ে দিতে চলেছেন? নাকি এখনো বিজেপির বিধায়ক হিসেবে থেকে যাবেন।
অন্যদিকে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন তিনি দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকর করে তবেই ছাড়বেন, শুধু মাত্র দুই থেকে তিন মাস সময় লাগবে। কিন্তু এই আইন কার্যকর করা খুব একটা সোজা হবে না। তার পাশাপাশি, মুকুল রায় পিতা শিশির অধিকারীও কিন্তু এখনও পর্যন্ত তার সাংসদ পদ ছাড়েননি। এইরকম একটি আইন কার্যকর হয়ে গেলে শিশির অধিকারীর দিকেও চাপ আসতে চলেছে। এই ব্যাপারটি ভালো করেই জানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার দল তৃণমূল কংগ্রেস। তাই মুকুল রায় তার বিধায়ক পদ ছাড়ার ব্যাপারে এখনো পর্যন্ত কিছু জানাননি। তিনি সরাসরি জানিয়েছেন, “এই বিষয়ে দল সিদ্ধান্ত নেবে।”
অন্যদিকে তৃণমূলের তরফ থেকেও এখনো পর্যন্ত মুকুল রায়ের বিধায়ক পদ ছাড়া নিয়ে কোনো ঘোষণা করা হয়নি। মুকুল রায় তৃণমূল আর একজন অন্যতম বড় অস্ত্র ছিলেন বেশ কিছু বছর আগে। ২০১৭ সালে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করার সময় দলের মধ্যে তাকে নিয়ে অনেক সমস্যা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু প্রায় সাড়ে তিন বছর পর আবারও এই পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ ফিরে এলেন তৃণমূল কংগ্রেসে। তারপর থেকেই বিজেপির লাগাতার দাবি জানাতে শুরু করলো, যাতে মুকুল রায় নিজের বিধায়ক পদ ছেড়ে দেন।
অন্যদিকে আবার, বিজেপির একাধিক নেতা এবং বিধায়ক বেসুরো হতে শুরু করলেন মুকুল রায় তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদানের পর থেকে। সম্ভাবনা রয়েছে শুধু মুকুল রায় নয় আরও বেশকিছু বিধায়ক এবং হেভিওয়েট নেতা বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে নাম লেখাবেন। এরকম পরিস্থিতিতে শুভেন্দু অধিকারী বললেন, ‘বিরোধী দলনেতা হিসেবে আমি জানি কিভাবে দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকর করতে হয় শুধু আমার দু তিন মাস সময় লাগবে এই আইন কার্যকর করতে। তবে কেউ যদি আমার মত বিধায়ক পদ ছেড়ে দিয়ে সাধারণ ভোটার হিসেবে অন্য দলে যোগ দেন তবে তা করতে পারেন তিনি।’ মুকুল রায়ের নাম না করে তৃণমূল কংগ্রেসকে বিঁধলেও উল্টোদিক থেকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল কংগ্রেস।
শুভেন্দু অধিকারীর এহেন দাবির পরেই তৃণমূল মুখপাত্র কুনাল ঘোষ পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন, শুভেন্দু অধিকারীর পিতা শিশির অধিকারীও এখনো পর্যন্ত কাঁথির সাংসদ পদ ছাড়েননি। তিনি শুভেন্দু অধিকারীকে পরামর্শ দিয়েছেন যেন আগে পিতাকে সাংসদ পদ ছাড়ার জন্য অনুরোধ করেন তিনি, তারপর যেন বাকিদের কথা বলতে আসেন। ইতিমধ্যেই লোকসভা তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লাকে শিশির অধিকারী এবং সুনিল মন্ডলের সাংসদ পদ খারিজ করা নিয়ে দলত্যাগ বিরোধী আইনে পদক্ষেপ গ্রহণের আর্জি জানিয়েছেন। তবে, তিন তিনবার চিঠি পাঠানোর পরেও এখনো পর্যন্ত লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা এই নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেননি, বরং তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাই আপাতত শিশির অধিকারী এবং সুনিল মন্ডলের সাংসদ পদ ছাড়ার ব্যাপারটি বিশবাঁও জলে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।
অন্যদিকে শুভেন্দু অধিকারী যদি দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকর করতে আসেন তাহলে কিন্তু সেই একই সমস্যায় পড়বেন কারণ, বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিষয়টিকে চিন্তাভাবনার স্তরে রেখে দিতে পারেন। অন্যদিকে বিজেপি, বহু কংগ্রেস বিধায়ক কে এবং সাংসদকে নিজের দলে শামিল করেছিল ভোটের আগে, তাই সে দিক থেকেও বিজেপির সমস্যা রয়েছে। তাই বলতে গেলে শুভেন্দু অধিকারীর দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকর করার হুংকার শুধুমাত্র হুঙ্কার হয়ে থেকে যেতে পারে। বিষয়টি ভালো করেই জানেন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ মুকুল রায়। তাই তিনি পুরো বিষয়টি নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য না করে, পুরো বিষয়টি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার দল তৃণমূল কংগ্রেসের উপরে ছেড়ে দিয়েছেন।