রাজ্য সরকার চালু করে দিয়েছে রাজ্যে দুয়ারে ত্রাণ প্রকল্প। ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পের জন্য রাজ্যের কাছে আবেদন জমা পড়েছে ৩ লক্ষ ৮১ হাজার। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা থেকে এক লক্ষ ৬২ হাজার ৩৭১ টি আবেদন জমা পড়েছে বলে জানিয়েছে রাজ্য সরকার। তারপরেই নাম রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার। এই জেলা থেকে এক লক্ষ ১৭ হাজার ৬৫১ টি আবেদন জমা পড়েছে। তবে এর মধ্যেও সবথেকে বেশি আবেদন জমা পড়েছে বাড়ি ভাঙ্গা নিয়ে। জানা যাচ্ছে এই দুয়ারে ত্রাণ প্রকল্পের জন্য ইতিমধ্যেই ২ লক্ষ ৪৭ হাজার বাড়ি ভেঙে যাওয়ার রিপোর্ট জমা পড়েছে রাজ্য সরকারের কাছে।
রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই আবেদন পত্র অনুযায়ী কাজ করা শুরু করে দিয়েছে। ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া চলছে এবং তার সঙ্গেই ইনকোয়ারী রিপোর্ট দাখিল করা হচ্ছে রাজ্য সরকারের কাছে। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ পেরিয়ে গেলেও, সরকারি আধিকারিকরা বর্তমানে সমস্ত রিপোর্টের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে জিআই ট্যাগ করে রিপোর্ট দিচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিপর্যস্ত এলাকায় দুয়ারে ত্রাণ পৌঁছে দেবার জন্য এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিলেন। বাড়ি ভেঙে যাওয়া থেকে শুরু করে গবাদি পশুর মৃত্যু পর্যন্ত সবকিছুতে ত্রাণ দেওয়ার কথা ঘোষনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কবে কোন খাতে কত টাকা করে দেওয়া হচ্ছে, চলুন দেখে নেওয়া যাক বিস্তারিত রিপোর্ট।
১) যাদের বাড়ি পুরোপুরিভাবে ভেঙে গেছে তাদের পরিবার পিছু ২০ হাজার টাকা করে সাহায্য করার ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে যাদের বাড়ি কিছুটা ক্ষতি হয়েছে তাদের ৫ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে রাজ্য সরকার।
২) দুগ্ধ প্রদান গবাদি পশুর ক্ষেত্রে দেওয়া হচ্ছে ৩০ হাজার টাকা করে। ৩০০০০ টাকা পাবেন শুধু মাত্র গরু এবং মহিষের ক্ষেত্রে। ছাগল এবং ভেড়ার ক্ষেত্রে এই অংকটা দাঁড়াচ্ছে ৩০০০ টাকা। এছাড়া বাছুরের ক্ষেত্রে পাবেন ১৬০০০ টাকা। যদি আপনার ষাঁড় এর কোন ক্ষতি হয় তাহলে ২৫হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।
৩) যেসব মৎস্যজীবীদের নৌকা সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে তাদের মাথাপিছু ১০০০০ টাকা করে দেওয়া হবে। এছাড়া যাদের জাল খারাপ হয়ে গেছে তাদের মাথাপিছু ২,৬০০ টাকা করে জাল কেনার জন্য দেবে রাজ্য সরকার। আংশিক ক্ষতি হওয়া নৌকা মেরামতি করার জন্য ৫০০০ টাকা দিতে চলেছে রাজ্য সরকার।
৪) শস্যের ক্ষতি হলে প্রত্যেক চাষিকে ন্যূনতম ১০০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকার মতো দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। এছাড়া যারা পান পাতা চাষ করেন তাদের মাথাপিছু ৫০০০ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে রাজ্য সরকার।
৫) সঙ্গেই যশ এর প্রভাবে যাদের গোডাউন এবং শোরুম ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে চলেছে রাজ্য সরকার।
অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে আমফানের সময় যে রকম ভাবে ত্রাণ নিয়ে সমস্যা হয়েছিল, সেই সমস্যা থেকে বেরিয়ে এসে যশ এর ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এবং অর্থের সদ্ব্যবহার করতে চাইছে রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে সমস্ত প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনেকেই আবার ক্ষতিগ্রস্তদের এই সরাসরি ত্রাণ ২০২৪ লোকসভা ভোট এবং ত্রিপুরা বিধানসভা ভোটের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাস্টার স্ট্রোক হিসেবে চিহ্নিত করছেন।