এবারে হয়তো আমরা জোট মঞ্চে একসাথে দেখতে পারবো বামফ্রন্ট এবং তৃণমূলকে। 2024 এ বিজেপিকে ঠেকাতে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলাতে তার কোনো আপত্তি নেই বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। এদিন তিনি জানালেন, বিজেপি ছাড়া যে কোনো দলের সঙ্গেই কাজ করতে তাঁরা সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত। রবিবার সিপিএম নেতা নির্মল জানার স্মরণসভায় 2024 এ বিজেপি বিরোধী জোটের প্রসঙ্গ তুললেন খোদ বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু।
বিমান বাবু বললেন, ” একাধিকবার নয় সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে এটা বহুবার ঘটেছে। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী কা হোক কিংবা কচ্ছ থেকে কোহিমা, বিজেপি বিরোধী সমস্ত শক্তির সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত আমরা। ” কিন্তু, বিমান বসুর এহেন একটি মন্তব্য কি কোনো রকম রাজনৈতিক ইঙ্গিতবাহী? তাহলে কি বামফ্রন্টের বিলম্বিত বোধোদয় হলো? রাজনৈতিক মহলের মতামত, এবারের বিধানসভা নির্বাচনে আসলে শত্রু চিনতে ভুল করে ফেলেচিলেন বামেরা। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে এই বিষয়টির পুনরাবৃত্তি চাননা বাম নেতৃত্ব। এই কারণেই হয়তো তৃণমূলের প্রতি সুর নরম বাম চেয়ারম্যান বিমান বসুর। বিজেপি বিরোধী শক্তিগুলিকে এককাট্টা করতে ইতিমধ্যেই প্রস্তুত হতে শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত 21 শে জুলাই শহীদ স্মরণ সভা থেকে প্রকাশ্যে বিজেপিকে উৎখাত করার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। 2024 এ লোকসভা নির্বাচনের জন্য বিরোধী দলগুলোকে একসাথে আসার বার্তা দিয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যেই কংগ্রেস-তৃণমূলের প্রতি কিছুটা সুর নরম করা শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে, বাম কংগ্রেস জোট এর ভবিষ্যৎ খুব একটা ভালো ঠেকছে না। তাই হয়তো এবারে প্রকাশ্যেই তৃণমূলের সঙ্গে সখ্যতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছেন বামেরা।
এতদিন পর্যন্ত তৃণমূল বিরোধী হওয়ার পরে বামফ্রন্ট কি তৃণমূলের সঙ্গে জোট করবে? এই প্রশ্নের উত্তরে বিমান বসু বলেন, ” আমি তো বলছি বিজেপি ছাড়া যে কোন দলের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত আমরা। এরপরে আর কোন কথা থাকে কি?” অর্থাৎ, বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু কথায় কোথাও একটা তৃণমূলের সঙ্গে জোট করার বার্তা উঠে আসছে। এবারের বিধানসভা নির্বাচনে, একসাথে তৃণমূল এবং বিজেপির বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে ছিল বামফ্রন্ট। কিন্তু সে প্রচার হয়তো মানুষের বোধগম্য হয়নি। বামফ্রন্টের ক্ষেত্রেই প্রচার পুরো বুমেরাং হয়ে গিয়েছিল। এবারের নির্বাচনে বিজেমূল স্লোগানটি তোলা যে একেবারে ভুল হয়েছিল, সেটা পরবর্তীকালে স্বীকার করেছিলেন সূর্যকান্ত মিশ্র।
অন্যদিকে আবার ভোট পরবর্তী সময়ে বামফ্রন্টের প্রতি বন্ধুত্বের মনোভাব প্রকাশ করেছিলেন খোদ তৃণমূল নেতারা। তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিধান পরিষদ করার স্বপক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে সিপিএমের কথা তুলে আনেন। তিনি বলেছিলেন, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বিজেপি থেকে সিপিএম একটু ভালো বোঝে। তাই নির্বাচনে শূন্য আসন পেলেও, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জন্য বিধান পরিষদের সিপিএমের থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। তারপরেই বিমান বসুর তৃণমূলের প্রতি সুর বদল। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে তৃণমূলের সঙ্গে জোট গড়ার বার্তা দিলেন বিমান বসু। যে সময় বিমান বসু এই বার্তাটি দিয়েছেন সেটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি গিয়ে সেখান থেকে বিজেপি বিরোধী জোটের সূত্রপাত করতে চলেছেন। এই কারণে জাতীয় এবং রাজ্য রাজনীতিতে বর্তমানে সিপিএম চেয়ারম্যান বিমান বসুর বক্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।