সমস্ত জল্পনার অবসান। শেষ পর্যন্ত বিজেপি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা আসানসোলের সংসদ বাবুল সুপ্রিয়। নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি একথা জানান। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন এখনই তৃণমূল কিংবা কংগ্রেস কিংবা সিপিআইএম কোন দলের সঙ্গেই তিনি যোগদান করছেন না। তবে বিজেপি ছাড়ার সিদ্ধান্ত যে একেবারে হুট করে নিয়েছেন তা কিন্তু নয়। অনেকদিন থেকেই মতানৈক্য চলছিল। তারপরেই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন বাবুল সুপ্রিয়।
বাবুল তার ফেসবুক পোস্টে লিখলেন, “সমাজসেবার কাজ করতে হলে কোন দলে থাকতে হয় না। রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ালাম পরিবারের সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই।” কিন্তু রাজনৈতিক মহলের সকলের এখন একটাই চিন্তার বিষয় এই সিদ্ধান্তের মূল কারণ কি? জানা যাচ্ছে 2014 ও 2019 পরপর দুইবার বিরাট ব্যবধানে জয়লাভ করে আসানসোল থেকে বিজেপি সাংসদ হয়েছিলেন বাবুল সুপ্রিয়। তিনি চেয়েছিলেন পূর্ণ মন্ত্রী হতে কিন্তু দুইবার থেকে দেওয়া হয়েছিল রাজ্য মন্ত্রীর পদ, অর্থাৎ প্রতিমন্ত্রী। সেই বিষয়টি নিয়ে তিনি আগে থেকেই বিরক্ত ছিলেন। তার মধ্যেই আবার এইবারে লোকসভায় তার মন্ত্রিত্বের মেয়াদ পূর্ণ হতে না হতেই তাকে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো। তারপর থেকেই মনে করা হচ্ছিল, বাবুল সুপ্রিয় বিজেপিতে বেসুরো বাজতে শুরু করেছেন।
তারপর থেকেই বাংলার রাজনীতিতে তাকে ঘিরে জল্পনা-কল্পনা শুরু। বিজেপিতে থাকছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে বাবুল সুপ্রিয় আগেও তেমন একটা সরাসরি উত্তর দিতে চাননি। একেবারে সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে বিজেপি ছাড়া সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। পাশাপাশি মন্ত্রিত্ব ছাড়া নয় একাধিক বিষয় নিয়ে দলের সঙ্গে তার মতানৈক্য হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। ফেসবুক পোস্টে তিনি এই সমস্ত ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন।
ফেসবুকে তার বয়ান, “চললাম আলবিদা। সবার কথা শুনলাম, বাবা, স্ত্রী-কন্যা, দুই একজন প্রিয় বন্ধুবান্ধব। সবার কথা শুনে বুঝে অনুভব করে বললাম, এখনই অন্য দলে যাচ্ছি না। আপাতত শুধুমাত্র মোহনবাগানকে সমর্থন করবো। বিগত কয়েকদিনে বারবার মাননীয় অমিত শাহ এবং মাননীয় জেপি নড্ডজির কাছে রাজনীতি ছাড়ার সংকল্প নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি আমি ওদের কাছে চির কৃতজ্ঞ যে প্রতিবার ওরা নানাভাবে আমাকে অনুপ্রাণিত করে ফিরিয়েছেন। এবার আর তাদের কাছে যাব না। এখন যদি আবার তাদের কাছে দল ছাড়া কথা নিয়ে যাই তাহলে তারা ভাবতে পারেন আমি কোন পদের জন্য বার্গেইন (দরদাম) করছি।”
কিন্তু রাজনীতির ছাড়লেন কেন? এতদিন পরে এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দিলেন বাবুল সুপ্রিয়। বাবুল বললেন, ” প্রশ্ন উঠবেই কেনই বা রাজনীতি ছাড়তে গেছিলাম? মন্ত্রীত্ব চলে যাওয়ার সাথে তার কোনো সম্পর্ক আছে? অবশ্যই আছে। কিছুটা তো অন্তত আছেই।” অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে, মন্ত্রিত্ব হাত থেকে চলে যাওয়ার পর থেকেই বিজেপির সঙ্গে সমস্যা শুরু হয়েছিল বাবুল সুপ্রিয়র। তারপরে আবার টালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বড় ব্যবধানের হার। তার সাথে সাথেই বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে বনিবনা না হওয়া। সবকিছু নিয়েই বিজেপির অন্দরে বেশ কিছুটা চাপে ছিলেন বাবুল সুপ্রিয় নিজেও। তাই সমস্ত চাপমুক্তি করার জন্যই মনে করা হচ্ছে তিনি রাজনীতি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।