ডায়াবেটিসের রোগীরা নানা ধরনের শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হন। এমনিতেই ডাক্তারি মতে, ডায়াবেটিস এই রোগকে সায়লেন্ট কিলার হিসেবে গণ্য করা হয়। সঠিক সময়ে সুগার নিয়ন্ত্রণ না করলে, অথবা সুগারকে অদেখা করে গেলে নানা শারীরিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। কথায় বলে ‘বিপদ কখনও একা আসে না’ সঙ্গে আরো অনেককে নিয়ে আসে।
কারণ ডায়াবিটিস টাইপ ২ বা সাধারণ মধুমেহর ক্ষেত্রে এই কথা বিশেষ ভাবে প্রযোজ্য। এই মধুমেহ রোগ থেকে রোগীর ধমনী ও হৃদ্যন্ত্র থেকে বৃক্ক, গুপ্ত ঘাতকের মতো নানান রোগের সমস্যার হাত থেকে রেহাই পায় না কোনো অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। এমনকি এও মধুমেহ রোগ পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে সকলের যৌন জীবনের এক গুরুতর সমস্যা তৈরি হতে পারে।
ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞদের মতে ডায়াবিটিস অবদমিত করে যৌন মিলনের ইচ্ছা হয়। আর তা থেকে কমে যায় শারীরিক সক্ষমতাও। আর এই মধুমেহর প্রভাবে বিঘ্নিত হয় হরমোন নিঃসরণ, যা রোগীর শারীরিক ও মানসিক দু’দিক থেকেই ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। পাশাপাশি, অনেক সময়ে রোগীর উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ খেতে বাধ্য হন মধুমেহ রোগীরা। আর এই ওষুধের পরোক্ষ প্রভাবেও কমতে পারে রোগীর যৌন আকাঙ্খা।
আর এই মধুমেহ’র আক্রমণে দেখা দিতে পারে ডায়াবিটিস ঘটিত সাইড এফেক্ট নিউরোপ্যাথি। আর বিশেষজ্ঞদের ডায়াবিটিসের প্রভাবে রোগীর স্নায়ুতন্ত্র আক্রান্ত হলে এই ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। আর এই রোগের প্রভাবে যৌনাঙ্গে ব্যথা ও অসাড়তার মতো নানান সমস্যা দেখা দেয়। কিছু ক্ষেত্রে আবার রোগীরা নিজের যৌনাঙ্গের অনুভূতি হারিয়ে ফেলেন। আর পুরুষদের ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে লিঙ্গ শিথিলতা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ ডায়াবিটিস রোগী কোনও না কোনও সময়ে লিঙ্গ শিথিলতায় ভোগেন। আর স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা ছাড়াও ডায়াবিটিস ঘটিত সংবহনতন্ত্রের সমস্যাও এর অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া ডায়াবিটিস রোগীদের জন্য আবশ্যিক কিছু ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ফলে কিছু ক্ষেত্রে পুরুষদের টেস্টোস্টেরন হরমোন ক্ষরণ বিঘ্নিত হতে পারে, যা কারণ হতে পারে লিঙ্গ শিথিলতার।
পশ্চাদমুখী বীর্যপাতও ডায়াবিটিস রোগীদের আর একটি বড় সমস্যার কারণ। এই রোগে পুরুষদের লিঙ্গের বদলে মূত্রাশয়ে বীর্য প্রবেশ করে। অভ্যন্তরীণ স্ফিঙ্কটর পেশীর কার্য ক্ষমতা হ্রাসই এই সমস্যার কারণ। রক্তে শর্করার পরিমাণের তারতম্যের ফলে এই পেশী নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্থ হয় বলেই এরূপ সমস্যা সৃষ্টি হয়।
আর মধুমেহ রোগে শুধু পুরুষরাই নন, ডায়াবিটিসে আক্রান্ত মহিলারও একই ভাবে একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। মধুমেহর প্রভাবে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যাটি নারী দেহে দেখা যায়, তা হল যোনিদেশের শুষ্কতা। হরমোনের নানান রকম তারতম্য ও রক্ত সঞ্চালনের সমস্যাই হল এই রোগের মূল কারণ। আর মধুমেহ বিশেষজ্ঞদের মতে ডায়াবিটিসের আক্রমণে মহিলাদের যোনির প্রদাহ ও সংক্রমণের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। বৃদ্ধি পায় মূত্রনালীর সংক্রমণ বা ইউটিআই-এর আশঙ্কাও।