কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ এনে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে চিঠি লিখলেন এক শিক্ষিকা। সেই শিক্ষিকার অভিযোগ স্কুলের সিসি ক্যামেরায় তাঁর ফুটেজ দেখে না কি ‘যৌন লালসা’ মেটাচ্ছেন সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। মঙ্গলবার এমন অভিযোগ এসেছে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কাছে। আর অভিযোগ ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে স্কুলশিক্ষা দপ্তরে।
পূর্ব বর্ধমানের অভিরামপুর এড়াল হাইস্কুলের ঘটনা। এই স্কুলে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানো হয় স্কুলটিতে। এই স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা ২৫ জন। আর স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১৫০০। উচ্চমাধ্যমিক স্তরে চুক্তির ভিত্তিতে পড়ুয়াদের পড়ান ওই শিক্ষিকা। তিনি প্রধানশিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষামন্ত্রীকে পাঠানো চিঠির কপি জেলাশাসক, মহকুমা শাসক ও জেলা স্কুল পরিদর্শকেও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর পুলিশে আলাদা করে এই অভিযোগ দায়ের করেননি। উলটোদিকে প্রধানশিক্ষক অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি চিঠি স্থানীয় আউশগ্রাম থানায় জমা দিয়েছেন। পুলিশি প্রক্রিয়া শুরু না হলেও এই বিষয়টির খোঁজ নিতে আর পারছেনা স্কুলশিক্ষা দপ্তর। ডিআইকে রিপোর্ট পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে শিক্ষিকা লিখিত অভিযোগ করেছেন, তাঁকে বহুদিন ধরে কুপ্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষিকা থাকেন বোলপুরে। তাঁদের বসার জায়গায় সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। তার ফুটেজ দেখে প্রধান শিক্ষক ‘যৌন লালসা’ মেটান। অভিযোগের সূত্র ধরে বোলপুরের কাছাকাছি কোনও স্কুলে বদলির আবেদনও করেছেন অভিযোগকারিণী। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে লেখা চিঠিতে ওই শিক্ষিকা অভিযোগ করেছেন, প্রধান শিক্ষক তাঁর উপর মানসিক নির্যাতন চালাচ্ছেন। তিনি জানিয়েছেন, “খুব দরকারে একবার প্রধান শিক্ষকের বাইকে চাপতে হয়েছিল। অপ্রয়োজনে বারবার উনি ব্রেক কষছিলেন। সে খুবই অস্বস্তিজনক পরিস্থিতি। ওইদিনের পর থেকেই উনি আমাকে কুপ্রস্তাব দিতে শুরু করেন। রাজি না হওয়ায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতি পদে আমাকে অপদস্থ এবং হেনস্থা করে যাচ্ছেন। আমি সব সময় আতঙ্কে থাকি। সুস্থভাবে কাজ করতে পারছি না।”
প্রধান শিক্ষক নিজের সাফাই আর শিক্ষিকার অভিযোগের পালটা দাবি করেছেন, ওই শিক্ষিকা দেরিতে স্কুলে আসেন। যখন খুশি স্কুল থেকে বেরিয়ে যান। স্কুলের শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা চলছে বলেই তাঁর বিরুদ্ধে এই পরিকল্পিত কুৎসা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, “আমার একমাত্র অপরাধ আমি সরকারি নিয়মে কাজ করি। স্কুল ঠিকভাবে চালাই। স্কুলে ১৬টি সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। আমি যে ওঁর ফুটেজ দেখি তা উনি কি করে জানলেন। আসলে যারা নিয়ম মানে না, পুরুষ হলে ঝামেলা করে আর মহিলারা হলে যৌন হেনস্তার অভিযোগ আনে।” তাঁর দাবি, এদিনের ঘটনায় স্কুলের বদনামের কথা ভেবে ছাত্রীরাও মাঠে বসে কেঁদেছে।
সেই অভিযোগকারী শিক্ষিকা আরো দাবি করেন, ওই স্কুলে তিনি ১৭ বছর কাজ করছেন। প্রতিদিন তিনি ৪০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে সকাল সাতটার ট্রেন ধরে সকাল ন’টার মধ্যে বিদ্যালয়ে আসেন। তাঁর আরো অভিযোগ, “প্রধান শিক্ষক তাঁকে বিকেল সাড়ে তিনটের সময় একটি ক্লাস দেন এবং সাড়ে চারটে পর্যন্ত বসিয়ে রেখে মানসিক নির্যাতন করেন। তাঁর বাড়িতে স্বামী এবং ছয় বছরের শিশু কন্যা আছে। মেয়ে অসুস্থ হলেও তিনি একটা ছুটি পান না। তিনি এমন প্রধান শিক্ষকের শাস্তি চাই।” প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, “তিনি দোষ করলে নিশ্চই শাস্তি মাথা পেতে নেবেন। চুক্তিভিত্তিক শিক্ষিকাদের চাইল্ড কেয়ার লিভ নেই। উনি তা চেয়েছিলেন। নিয়ম ভেঙে তা তিনি কি করে ওইছুটি দেবেন। ”