সমাজকর্মী অতীন্দ্র চক্রবর্তীর দৌলতে সোশ্যাল মিডিয়ার হাত ধরেই মানুষের মাঝে সাময়িক স্টার হয়েছিলেন রানাঘাটের রানু মন্ডল। একটা সময় রানাঘাটের স্টেশনে বসে গান গেয়ে ভিক্ষা করতেন তিনি। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই তার জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে যায় বহু মানুষের মাঝে। বলিউডেও পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। হিমেশ রেশ্মিয়ার সুরে গানও গেয়েছিলেন রানু মন্ডল। আর এর জন্যই তৈরি হয় ঠুনকো সম্মানের প্রাচীর। যার জন্য এখন তিনি আর স্টেশনে বসে ভিক্ষাও করতে পারেন না। প্রতিমুহূর্তে নেটনাগরিকদের অধিকাংশের মাঝে কটাক্ষের শিকার হতে হয় তাকে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সাময়িক জনপ্রিয়তা পেলেও বর্তমানে তিনি আবারো ফিরে এসেছেন তার পুরনো জায়গাতেই।
এক জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি জানিয়েছেন, ইউটিউবাররা প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে তাকে রীতিমত বিরক্ত করার জন্য ঢুকে পড়েন বাড়িতে। শুধুমাত্র নিজেদের চ্যানেলের কিংবা পেজের লাইক কিংবা ফলোয়ার্স বাড়ানোর জন্য তারা তার সাথে দেখা করতে আসেন। যখন-তখন ঢুকে পড়েন বাড়িতে। তবে কেউ এসে তার খিদের খোঁজ নেয় না। বেশিরভাগ দিনই আধপেটা থাকতে হয় তাকে। সকালে উঠে লিকার চায়ের সাথে খান দুটো মেরি বিস্কুট। দুপুরবেলা হয়তো বেশিরভাগ দিনই ৫ টাকার চাউমিন সেদ্ধ করে খেতে হয় তাকে। রাতের বেলা অর্ধেক দিনই খিদে নিয়ে শুয়ে পড়তে হয়। একথা নিজের মুখেই জানিয়েছেন তিনি।
তিনি এও জানিয়েছেন, বাড়ির গেটে সবসময় তালা ঝুলিয়ে রাখতে হয়, নাহলে কেউ না কেউ ঢুকে পড়ে বাড়ির ভেতর। একরাশ গানের অনুরোধ নিয়ে বসে পড়ে তার সামনে। খিদের জ্বালায় বেশিরভাগ সময়ই তিনি মাথা ঠান্ডা রাখতে পারেন না। করে ফেলেন উল্টোপাল্টা কাণ্ডকারখানা, আর যার জন্যই নেটনাগরিকদের কাছে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে উঠেছেন রানু মন্ডল। তার কথার মধ্যেই ছিল একরাশ অভিযোগ। সকলেই নিজের স্বার্থে আসেন তার কাছে। তারা নিজেদের চ্যানেল কিংবা পেজের ভিউয়ার্স কিংবা ফলোয়ার্স বাড়াতে আসেন। তবে কেউ নিজে থেকে তার খিদের খোঁজ নেন না। তার কথায়, পেটে একরাশ খিদে নিয়ে তার গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোতে চায় না, তখনই তিনি তাদের সামনে মেজাজ হারিয়ে ফেলেন আর যার জন্যই অনেকসময় নেটনাগরিকদের মাঝে কটাক্ষের শিকার হতে হয় তাকে। তাদের জ্বালায় অনেকসময় চান পর্যন্ত করতে পারেন না।
একটি ভাঙাচোরা বাড়িতে থাকেন তিনি। বাড়ির সামনে একফালি মাঠ। বাথরুম যেতে গেলও বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে হয়। ভরসা একটি পুরনো টিউবওয়েল। সকালে দিনের আলো দিয়েই কাটিয়ে দেন। আর রাতের ভরসা বলতে ঐ একরত্তি ডুম। তাও বেশিরভাগ দিনই অন্ধকারে রাত কাটাতে হয় তাকে। অনেকসময় সেই অন্ধকার ঘর থেকেই গান ভেসে আসে, যা হয়ত আশেপাশে থাকা কয়েকজন মানুষ ছাড়া জানেন না কেউই। সকলেই হয়তো তাকে নিয়ে মজা করেন। তবে দিনের শেষে তার কষ্টের খোঁজ নেননা কেউই।