অরূপ মাহাত: পুজোর প্যান্ডেলের কাজ শুরু হয়ে গেছে। অপেক্ষা আর কয়েকদিনের। তারপরই মহালয়ার আরাধনায় শুরু হয় দেবী বরণ। পিতৃপক্ষের শেষে দেবীপক্ষের সূচনায় এই আরাধনায় করা হয়ে তর্পণ। এই দিনে আমরা পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ করে থাকি, তাঁদের জলদান করি ও তাঁদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানিয়ে থাকি। এই তর্পণ কেন করা হয়, তা নিয়ে অবশ্য ভিন্ন মত রয়েছে।
হিন্দু পুরাণ অনুসারে, মৃত ব্যক্তির তিনপুরুষের বাস পিতৃলোকে। স্বর্গ ও মর্তের মাঝখানে পিতৃলোক থেকে পূর্বপুরুষেরা যাতে নির্ঝঞ্ঝাটে স্বর্গে গমন করতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যেই তর্পণ করা হয়।
আবার রামায়নে এর অন্য ব্যাখ্যা রয়েছে। এইদিন প্রয়াত ব্যক্তিদের আত্মারা মর্ত্যে আসেন। যার জন্য এর নাম মহালয়া। এইদিন পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করতে হয়। রামচন্দ্রও লঙ্কা বিজয় সেরে অকাল বোধনে দেবীকে মর্ত্যে নিয়ে এলে এই প্রথা মেনেই তর্পণ করেন।
মহাভারতে তর্পণ সম্পর্কে অবশ্য অন্য কাহিনী শোনা যায়। দাতা কর্ণের মৃত্যুর পর তাঁর আত্মা স্বর্গে গেলে তাঁকে সোনা ও মূল্যবান ধনরত্ন খাদ্য হিসেবে দেওয়া হয়। কর্ণ অবাক হয়ে এর কারণ জানতে চাইলে দেবরাজ জানান যে কর্ণ তাঁর সারাজীবনে অনেক দানকর্ম করলেও প্রার্থিত ব্যক্তিকে শুধুমাত্র মূল্যবান ধনরত্নই দিয়ে গেছেন। অথচ তাঁর পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে কখনও খাবার দেননি। কর্ণ তখন তাঁর ভুল বুঝতে পেরে তা স্বীকার করে নিলে তাঁকে ষোলো দিনের জন্য আবার পৃথিবীতে ফিরে গিয়ে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে খাদ্য ও জল দান করার অনুমতি দেন ইন্দ্র।
অন্যদিকে য়গরুড় পুরাণ অনুযায়ী ‘পুত্র ছাড়া মুক্তি নেই’। তাই তর্পণের মাধ্যমে পুত্রের পিতা ও পূর্বপুরুষের উদ্দেশ্যে নিবেদন করা অন্ন ও জলই কার্যত পূর্বপুরুষের মুক্তির উপায় বা মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়। যে কারণে হিন্দুধর্মে মহালয়ার দিনে পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে করা তর্পণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।