পূজো আসতে আর মাত্র কটা দিন বাকি। বাড়িতে ছোট থেকে বড় সবাই শুরু করে দিয়েছে কাউন্টডাউন। অফিসের মানুষরা শুরু করে দিয়েছে কে কত টাকা পুজোর বোনাস পাবে সে হিসাব করতে। আর বাড়ির গিন্নি ব্যস্ত সব কেনাকাটার পরে কাকে কিভাবে সেগুলো পৌঁছে দেওয়া যায় সেই ভাবতে। আর কচিকাচাদের স্কুলে ছুটি না পড়লেও একটা যেন কোথাও পুজোর আমেজ তৈরি হয়ে গেছে। টিফিনের ফাঁকে ছুটি হলেই জিজ্ঞাসা করা কার কটা জামা হলো। কিন্তু এতকিছুর পরেও পুজো কিন্তু এখনো আসেনি। কেন আসেনি জানেন? এখনো যে মহালয়া আসেনি।
মহালয়া কথাটি শুনলেই সে ভোরবেলা রেডিওর নব ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ঘুম ঘুম চোখে বিছানায় শুয়ে এক উদাত্ত কন্ঠের কথা মনে পড়ে। আজ অবশ্য রঙিন টিভি দৌলতের লাল নীল মহালয়া দেখতে কচিকাঁচারা ব্যস্ত। কিন্তু সেই রেডিওর মহালয়ার মধ্যে যে একটা নস্টালজিক ভাব ছিল তা কিন্তু এখনো আমাদের মধ্যে বর্তমান। ওই আওয়াজটা শুনতে না পেলে জানো মহালায়া দিন টা বড্ড মন কেমন করে। 1932 খ্রিস্টাব্দে প্রত্যুষ প্রোগ্রাম নামে এই মহান অনুষ্ঠানটির প্রথম শুরু হয়, পরের বছর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় প্রভাতী অনুষ্ঠান, 1936 সালে আবার নামবদল এবার নাম রাখা হয় মহিষাসুর বধ, তারপর পরের বছর শেষবারের জন্য অনুষ্ঠানের নাম বদল করে রাখা হয় মহিষাসুরমর্দিনী এবং সেই নামটি এখনো চলে আসছে।
এই অনুষ্ঠানটিতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মাঝ খানে গান গেয়েছেন অনেক বিশিষ্ট শিল্পীরা যেমন দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথম প্রথম অনুষ্ঠানটি প্রতিবছর নতুন করে করতে হতো। কারণ তখন রেকর্ডিং ব্যবস্থা এত উন্নত ছিল না। তবে শেষ রেকর্ড করা হয় 1966 সালে।যা আমরা এখনও শুনতে পাই। তবে মাঝখানে মহানায়ক উত্তম কুমার একবার এই এটি করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তা একেবারেই সফল হয়নি। সাধারণ মানুষ কিছুতেই গ্রহণ করতে পারেননি তাকে। আবারও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র কে ফিরিয়ে আনা হয়।
“বাজলো তোমার আলোর বেণু”
এই গানটির সুর যেন বলে দেয় মা আসতে আর কয়েকদিন বাকি। মহালয়া এদিনটি পিতৃপক্ষের শেষ হয় দেবীপক্ষের সূচনা হয়। গঙ্গার ঘাট গুলোই তর্পণের জন্য মানুষের ভিড় হয়।
Written By – শ্রেয়া চ্যাটার্জি