আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জি,
ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা,
প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগৎ মাতার আগমনী বার্তা”- স্বর্গীয়
বীরেন্দ্রকৃষ্ন ভদ্রের কন্ঠসুরে উচ্চারিত দেবী আহ্বান ছাড়া মায়ের আগমনী বার্তার আভাস পাওয়া যায় না, তার স্তোত্র পাঠই জানান দেয় ঘরের মেয়ে উমার মর্ত্যে আসার সময় হলো। সঙ্গে ভোরের আকাশের পেজা তুলোর মেঘ , মাঠে কাশফুল জানান দেয় মা আসছে সকলের আঙিনায়।
কিছুদিন বাদেই মহালয়া। শাস্ত্রীয় বিধান মতে মহালয়ার অর্থ মহান আলোয় দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার আহ্বান কর, এই মহালয়া থেকেই দেবীপক্ষের সূচনা।আর মহালয়া মানেই পুজো আর দুর্গাপুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালির আবেগ বাঙালির ভালোবাসা আর। যারা কর্মসূত্রে বিদেশবাসী তারাও উমার সঙ্গে আসেন নিজের মাতৃভূমিতে। মহালয়া থেকেই শুরু হয় পুজোর প্রস্তুতি। এই মহালয়ার দিনেই যান্ত্রিকতার সমাজে ডুবে যাওয়া মানুষের মধ্যে প্রান সঞ্চারিত হয়, জীবনে হারিয়ে যাওয়া ভোর ফিরে আসে, শোনা যায় পাখির কলরব কংক্রিট এর দেওয়াল পেরিয়ে-
পুরনো আমলের সেই স্মৃতিমাখা রেডিওটা
যেটা পরে ছিল সেই চিলেকোঠার একপ্রান্তে,
আজ আবার ধুলোমাখা যন্ত্রটি
ফিরে পাবে অস্তিত্ব নিজের।।
আর সেখান থেকে প্রতিধ্বনিত হবে সেই সুর-জাগো তুমি জাগো..জাগো দুর্গা জাগো দশপ্রহরনধারিনী। তবে মহালয়া মানেই যে কেবল মায়ের আগমন তাই নয় মায়ের আগমনকে কেন্দ্র করে উৎসবের শুভারম্ভ ..তাই এইদিন যারা সারাবছর অনলাইন শপিং এ অভ্যস্ত তারাও দোকান রাস্তার ভিড় উপেক্ষা করে শেষ মুহূর্তে দোকানে গিয়ে পুজোর বাজার করবে, কিংবা এক দরিদ্র কৃষক নিজের জমানো কিছু টাকা দিয়ে মেয়ের জন্য জামা কিনে আনবে আর ওই ছোট্ট একরত্তি মেয়েটির মুখে ফুটে উঠবে এক চিলতে হাসি।
বাঙালি বলে কথা এতকিছু পর খাবার না হলে তো পুরোটাই অসম্পূর্ণ আর মহালয়া মানেই তো ফিস্ট পরিবার বন্ধু মিলিত হয়ে চলবে খাওয়া দাওয়া সঙ্গে বাজি ফটকা। চলবে কবে কোথায় কোন ঠাকুর দেখবে তার আড্ডা। আলোর রোশনাই-এ চারিদিকে জানান দেবে মা আসছে। এক আশ্চর্য জাদুতে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবে সকল দুঃখ মলিনতা ,চেনা শহর সেজে উঠবে।
তবে কোন উৎসব পূর্ণতা পায় না শিকড়ের সন্ধান ছাড়া তাই এই মহালয়ায় গঙ্গাতীরে ভক্তরা পূর্বপুরুষদের আত্মার মঙ্গল কামনায় তর্পণ করেন এর মাধ্যমে তারা যেন ফিরে আসেন শরতের রোদ্দুর হয়ে।
Written by – দেবস্মিতা ধর