সকাল থেকেই আকাশের মুখ ছিল থমথমে। বেলা গড়াতেই ধর্মতলা চত্বর ভিজলো বৃষ্টিতে। কিন্তু বৃষ্টি উপেক্ষা করেই হাজার হাজার মানুষ তাদের প্রিয় জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতা শোনার জন্য ছাতা মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। একে একে সব তৃণমূল নেতা বক্তৃতা দেওয়ার পর একদম শেষে মঞ্চে উঠলেন মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তিনি মঞ্চে পৌঁছাতেই সমবেত জনতা জয় বাংলা রবে মুখরিত হল। বাংলার বিভিন্ন জেলা থেকে তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা একুশে জুলাই শহীদ দিবস উপলক্ষে ধর্মতলা চত্বরে সমবেত হয়েছিলেন শুধুমাত্র তৃণমূল সুপ্রিমোর বক্তব্য শোনার জন্য। আর মঞ্চে ওঠে নিজের স্বভাব সিদ্ধভঙ্গিতে গেরুয়া শিবির এবং কেন্দ্র সরকারকে তীব্র আক্রমণ করে ভোকাল টনিক দিলেন তৃণমূলনেত্রী।
মঞ্চে উঠে বক্তৃতা দেওয়ার আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত জনতাকে ধন্যবাদ জানান এই বৃষ্টির মধ্যে তৃণমূলের সাথে থাকার জন্য। তিনি আবেগতাড়িত হয়ে বলেন যে প্রতিবছর একুশে জুলাই বৃষ্টি হয়। শ্রাবণ মাসে বৃষ্টি হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রত্যেক বছরের মত এই বছর আপনারা বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে আমাদের পাশে রয়েছেন। এটাই তৃণমূল কংগ্রেসের ম্যাজিক। এরপর মুখ্যমন্ত্রী একুশে জুলাই এর ভাষণে গেরুয়া শিবির এবং কেন্দ্র সরকারকে নিশানায় এনে বক্তব্যে ঝড় তুললেন।
এক নজরে দেখে নিন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোকাল টনিকের বিশেষ মুহূর্ত:
- আজ এত বৃষ্টিতেও এত ঝড়-জলেও যখন আপনাদের একজনকেও সরাতে পারেনি, তখন মনে রাখবেন মানুষের এই বৃষ্টি বিজেপিকে ২০২৪ সালে ভারত থেকে ভাসিয়ে নিয়ে চলে যাবে। আমাদের লড়ার ক্ষমতা আছে। ওদের লড়ার ক্ষমতা নেই। আমাদের মেরুদণ্ড সোজা। ওদের মেরুদণ্ডে একদিকে সিবিআই, একদিকে ইডি, অন্যদিকে ইনকাম ট্যাক্স, জিএসটি। ওদের মেরুদণ্ড বাঁকা, ওরা মাথা নীচু করে চলে।
- কেন্দ্রীয় রিপোর্ট বলছে, কৃষকদের আয়ের দিক থেকে প্রথম বাংলা। আমি গর্বিত। সারা ভারতে ৪৫ শতাংশ বেকারত্ব বেড়েছে। বাংলায় ৪০ শতাংশ বেকারত্ব কমে গিয়েছে, দারিদ্র কমে গিয়েছে।
- তৃণমূল কংগ্রেস থাকলে ফ্রি-তে রেশন পাবেন, লক্ষ্মীর ভান্ডার পাবেন। স্কুলে গেলে সাইকেল পাবেন, ব্যাগ পাবেন, খাতা পাবেন। তৃণমূল কংগ্রেস থাকলে কন্যাশ্রী পাবেন। তৃণমূল কংগ্রেস থাকলে স্বাস্থ্যসাথী পাবেন। তৃণমূল কংগ্রেস থাকলে কৃষক বন্ধু পাবেন। তৃণমূল কংগ্রেস থাকলে পেনশন পাবেন, ভাতা পাবেন।
- বাম আমলে চাকরি বিক্রি হয়েছে। ১০-১৫ লক্ষ টাকায় এক একটি চাকরি বিক্রি হয়েছিল। নাম বলে ছোট করতে পারি না। সিপিএমের একটা কাগজ আছে। দলের কাগজ। জিজ্ঞেস করুন তো তাতে যাঁরা সাংবাদিক রয়েছেন, তাঁদের বেশিরভাগের স্ত্রী শিক্ষকতার চাকরি পেয়েছিলেন কী করে? যোগ্যতার বিচারে? ছেলেরা পার্টি করবে আর বউরা চাকরি করে।
- মুড়িতেও জিএসটি! ইডি, সিবিআই এলে মুড়ি খেতে দেবেন। সঙ্গে একটু তেল দেবেন। বলে দেবেন, এর জিএসটি নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না। মিষ্টি, চিড়ে, দইতেও জিএসটি, লস্যিতেও জিএসটি, নকুলদানায় কত জিএসটি? বাতাসায় কত জিএসটি? নিমপাতায় কত জিএসটি? লোকে কী খাবে? খাব কী? মানুষ খাবে কী? আমাদের মুড়ি ফিরিয়ে দাও, নাহলে বিজেপি বিদায় না। পরিষ্কার কথা।