লকডাউনের জন্য মানুষের অসুবিধার শেষ নেই। যারা দিন আনে দিন খায় সেই গরিব মানুষগুলোর হয়েছে সবচেয়ে কষ্ট। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ছাড়া সেভাবে আর কোনো কিছুর দোকান খুলছে না। যারা দর্জি, শ্রমিক, কিংবা রাস্তার ধারে খাবারের দোকান ছিল, তাদের মতো মানুষদের এখন অভাবে দিন কাটছে। এই অভাবের জেরে দু মুঠো অন্ন জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে তারা। বর্তমান পরিস্থিতিতে মালবাজারের বাজারে ঘটেছে এক বেদনাদায়ক কাহিনী।
মালবাজারের অয়ন নামের একটি ছেলে বাজারে ডিম বেচতে এসেছে। তাঁর মুখে মাস্ক পরা। তবে এই মাস্ক শুধুমাত্র যে সাবধানতার জন্য পড়া হয়েছে তেমনটা নয়, এর সাথে এই মাস্ক পড়লে তো মুখ ঢাকা থাকবে। তাহলে তো অয়নকে কেউ চিনতে পারবে না। আসলে এই অয়ন হল মালবাজারের আদর্শ বিদ্যাভবনের ‘ফার্স্ট বয়’, সে এবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে।
পরীক্ষা তো শেষ হয়নি। বেশ কয়েকটি পরীক্ষা বাকি আছে, তাহলে পড়াশুনা ছেড়ে বাজারে ডিম বেচছে কেন সে? আসলে ওর বাবা দীনেশবাবু দর্জির কাজ করেন কিন্তু লকডাউনের জন্য সে দোকান তো বহুদিন বন্ধ। সংসার তো আর চলছে না। এই সংসার সামলাতে দু মুঠো অন্ন জোগাড় করতে দীনেশবাবু মালবাজারের বাজারগুলিতে সবজি বিক্রি করতে বসেছেন। আর তাঁর ছেলে অয়ন সেন যে কিনা মাধ্যমিকে ৬১৩ পেয়ে স্কুলের মধ্যে প্রথম হয়েছিল। সে এখন বাজারে বসে ডিম বেচছে।
অয়ন কিন্তু পড়াশুনা করতে চায় কিন্তু এখন দিনরাত বই নিয়ে বসে থাকলে চলবে না, একথা নিজেই বলেছে সে। তবে তার কথায় রয়েছে আক্ষেপ। সে বলেছে যে যদি বাড়িতে বসে পড়া যেত, আরও ভালো রেজাল্ট হত। এই খবর সামনে আসায় অয়নের স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেছেন যে অয়নের মতো মেধাবী ছাত্রের এরকম অবস্থায় তাঁরা কিছু উপায় বার করার ব্যবস্থা নেবেন।
অয়নের বাবা খুব কষ্টের সাথে বলছেন যে ছেলে রাস্তায় বসে ডিম বেচবে তা তিনি কোনোদিন চাননি। অয়ন কিন্তু কেউ ডিম কিনতে এলে তাঁর দিকে ঠিকমতো তাকায় না, যদি সে অয়নকে চিনে ফেলে!