সদ্য মা হওয়া এক মুমূর্ষ রোগীকে নিজের রক্ত দিয়ে প্রাণ বাঁচালেন এক পুলিশ অফিসার
কলকাতা শহরের বুকে আবারো দেখা গেল পুলিশের এক মানবিক মুখ। পুলিশ আমাদের রক্ষাকর্তা , সমাজকে অপরাধমুক্ত রাখার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের বিভিন্ন বিপদে আপদে রক্ষা করার দায়িত্ব পালনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ও কর্তব্যরত। সেই কর্তব্য ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ জাইগা থেকে সদ্য মা হওয়া এক মুমূর্ষ রোগীকে নিজের রক্ত দিয়ে প্রাণ বাঁচালেন এক পুলিশ অফিসার। সোদপুর ঘোলা থানার আইসি বিশ্ববন্ধু চট্টরাজ এমনি মহামানবিক মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তার এই মহৎ দানে প্রাণ ফিরে পেয়েছে মহিলা। তার এই ঘটনাটি ইতিমধ্যে ভাইরাল হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায় ও পুলিশ অফিসার এর এই কর্মকাণ্ডে সবাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ঘটনাটি ৯ই জানুয়ারি কিন্তু সন্দীপ মিত্র নামে এক ব্যাক্তি সোশাল মিডিয়াতে ১৪ই জানুয়ারি তার এই ঘটনাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন ও তারপর থেকেই সেই পোষ্টটি ভাইরাল হতে শুরু করে।
ঘটনাটির সম্পর্কে বিশদ জানার জন্য ভারত বার্তার প্রতিনিধি যোগাযোগ করেছিল ঘোলা থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার এর সাথে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি তার মূল্যবান মতামত ভারত বার্তাকে জানান।
ঘটনাটি অ্যাকচুয়ালি সেদিন কি ঘটেছিল ?
বিশ্ববন্ধু চট্টরাজ : 9 জানুয়ারি সকাল 8:30 পৌনে নটা নাগাদ ( খুব সম্ভবত ) ব্লাড ব্যাংকের ইনচার্জ ডাঃ কৌশিক সারেঙ্গী ফোন করে জানান বি এন বসু হসপিটালে একজন ভর্তি আছে। তার দুই ইউনিট O নেগেটিভ রক্ত লাগবে। তারমধ্যে 1 ইউনিট রক্ত হাসপাতালে ব্লাড ব্যাংক থেকে এরেঞ্জ করতে পেরেছে আর বাকি এক ইউনিট এর জন্য তারা 14 জন ডোনারের সাথে যোগাযোগ করেছিল কিন্তু সেরকম কোন রেসপন্স পায়নি বা ব্লাড জোগাড় করতে পারেনি। মহিলার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল এবং ও নেগেটিভ রক্ত দুর্লভ থেকে দুর্লভতর গ্রুপ। যার জন্যে পাওয়া যাচ্ছে না। সেপ্টেম্বরে থানার তরফ থেকে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল ও তখন তিনি জেনেছিলেন যে আমার ও নেগেটিভ রক্ত আছে এবং আমি বলেছিলাম মঞ্চ থেকে যে , আমি রিজার্ভ থাকি , আমি তো ক্যাম্পে দেইনা যেহেতু সেটা O নেগেটিভ গ্রুপ। তো সেই কারণে যে কোন সময় দরকার হলে আমার সাথে যোগাযোগ করবেন , আমি পৌঁছে যাবো । সেই কথাটা তারা মেন্টাল নোট নিয়েছিলেন তো সেই কারণেই উনি আমার সাথে যোগাযোগ করেন। তারপর সঙ্গে সঙ্গে মাননীয় সিপি স্যারকে ফোন করি । সিপি স্যার বললেন ঠিক আছে যাও কোনো অসুবিধা নেই। তারপর সেখানে যাই ও রক্ত দিই।
এখনো সেই ভাবে সেই অর্থে রক্তদান এর কার্যে ব্রতী হয়না। আপনি সেই সব মানুষকে রক্তদানের উৎসাহ দেবার জন্য কিছু কি বলতে চান ?
বিশ্ববন্ধু চট্টরাজ : ডেফিনেটলি , দেখুন ঘটনা হচ্ছে রক্ত যার যখন দরকার হবে প্রত্যেকেরই গিয়ে পাশে দাঁড়ানো দরকার। আপনি সাংবাদিক হিসেবে ফোন করছেন আমি আপনাকে অনুরোধ করবো আপনারা হয়তো আমার রক্তদানের খবরটা আজকে খবর করবেন । আগামীদিনে যদি কারো দরকার হয় আপনারাও যেন একইভাবে সেভাবে সকলে রেসপন্স করে। এটা আমার সবার কাছে আপিল থাকবে প্রত্যেকের কাছে। এটা হয়তো আজকে ওই মহিলাটির দরকার হয়েছে , কালকে হয়তো অন্য কারো দরকার হতে পারে , আজকে আমারও দরকার হতে পারে। আমরা যদি পাশাপাশি সবাই সবার কাছে না দাঁড়াই তাহলে তো সেই সেন্সে জীবনের কিছু মানেই থাকে না। এটা একটা কাজ যার সবারই করা উচিত আমার যেটা মনে হয়।
মা ও ছেলেকে দেখতে গিয়েছিলেন ?
বিশ্ববন্ধু চট্টরাজ : মা ও ছেলেকে দেখতে গেছিলাম, সুপার স্যার নিয়ে গিয়েছিলেন ওয়ার্ডে। ভালো লেগেছে তারা যেহেতু দুজনেই আজ ভালো ও সুস্থ আছে।
আপনার সাথে সুপার গিয়েছিলেন ?
বিশ্ববন্ধু চট্টরাজ : হ্যাঁ সুপার গিয়েছিলেন। সুপার আমাকে একটা পুষ্পস্তবক দেন এই কাজের জন্য। আপনি যদি সেই সময় না আসতেন তাহলে যা কন্ডিশন ছিল সে এক্সপায়ার করে যেত ! সেই জন্য তিনি আমাকে একটা পুষ্পস্তবক দিয়েছিলেন , মানে শুভেচ্ছা বার্তা আর কি যেটা।
৪) আমরা এর আগে বহুবার দেখেছি বহু রাজনৈতিক দল বিভিন্ন কারণে পুলিশের দিকে নানা কারণে আঙ্গুল ওঠায়। সেখান থেকে দাঁড়িয়ে আপনি কি বলবেন ?
বিশ্ববন্ধু চট্টরাজ : দেখুন আমি কোন অন্য কোনো বিষয় নিয়ে তো বলতে পারব না। আমার যেটা মনে হয়েছে যে আমাকে একটা মুমূর্ষু রোগীর প্রাণের রেস্পেক্ট বলেছে। মুহুর্তের মধ্যে আমার মনে হয়েছে আমার যাওয়ার দরকার ও আমি গিয়েছি। পাশে দাঁড়িয়েছি ও আগামী দিনেও আপনাদের কাছে কমিটমেন্ট রইল সিমিলার ইস্যু যেকোনো সময় হবে তিন মাসের গ্যাপ দিয়ে যেহেতু তিনমাস রক্ত দিতে পারব না। ৯ই জানুয়ারি রক্ত দিয়েছি তার সাথে তিন মাস যোগ করে যেকোনো সময় দরকার হবে , আপনাদেরকে বলা রইল। আপনারাও ফোন করতে পারেন যেকোনো জায়গায় সময় যদি পারমিট করে যেহেতু আমি একটু অন্য ধরনের সার্ভিস করি , সেইদিন বিশেষ কোন ডিউটি যদি না থাকে তাহলে ডেফিনেটলি আমি সেখানে যাব।
[ সাক্ষাৎকার গ্রহণ : প্রীতম দাস ]