বলিউডের সুখী দম্পতির মধ্যে একজন ছিল
বলিউডের ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’ আমির খান এবং পরিচালক কিরণ রাও। টানা সাড়ে ১৫ বছর জমিয়ে সংসারও করেছেন এই জুটি। কিন্তু নাহ, আর নয়। শনিবার সকালে নিজেদের দাম্পত্য জীবনের ইতি টানার খবর জনসমক্ষে শেয়ার করলেন নিজেরাই। এক যৌথ বিবৃতিতে আমির জানিয়ে দিলেন নিজেদের বিবাহ বিচ্ছেদের কথা। শুধু তাই নয়, এই বিবৃতিতেই আমির ও কিরণ জানিয়ে দিয়েছেন তাঁদের এই সিদ্ধান্ত একেবারেই আচমকা নয়, বরং বহু আলোচনার পরেই নিয়ম মেনেই ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।
তবে ডিভোর্স হলেও বন্ধুত্ব আগের মতো বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমিরের এই দ্বিতীয় বিয়েও বেশিদিন স্থায়ী ছিলনা। তবে এই দুজনেই হঠাৎ করে ডিভোর্স নেওয়ার সিদ্ধান্তের কারণ জানা যায়নি। কিরণ আর আমির জানিয়েছেন, এই ১৫ বছর ধরে অনেক হাসি-মজা আনন্দে বহু স্মরণীয় মুহূর্ত কাটয়েছেন। বিশ্বাস, সম্মান ও ভালবাসায় নিজেদের সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। এবার তাঁরা জীবনের আরও এক নতুন অধ্যায় শুরু করতে চাইছেন। তবে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে নয়, অভিভাবক এবং পরস্পরের পরিবার হিসেবে।
প্রথম স্ত্রী থাকাকালীনই অভিনেতার জীবনে এসেছিলেন পরিচালক কিরণ রাও। কিন্তু কিভাবে? ২০০১ সালে আমির খানে ব্লকবাস্টার ছবি ছিল “লগান”। আর সেই সিনেমার সেটেই শ্যুটিং এর মাঝেই প্রথম কিরণের সঙ্গে সাক্ষাৎ আমিরের। ছবিতে আশুতোষ গোয়ারিকরের সহকারী পরিচালক হিসাবে কাজ করছিলেন কিরণ। প্রথম আলাপে ধীরে ধীরে ভালো বন্ধু হয়ে ওঠে এরা দুজন। সেই সময় কিরণ অভিনেতার কাছে ছিল এক ইউনিটের পাঁচ জন সহকারীর মধ্যে একজন।
একসময়ে কিরণ রাও আমিরের প্রথম স্ত্রী রীনা দত্তের সহকারী হিসাবে কাজ করতেন। আর কাজের সূত্রে ধীরে ধীরে ভালো বন্ধু হয়ে ওঠে কিরণ আর আমির। তবে জানা যায়, কিরণ আসার কিছুদিন আগে থেকে অভিনেতার প্রথম স্ত্রী রীনা দত্তের সম্পর্কের নানান টানাপড়েন চলছিল।। শেষপর্যন্ত ২০০২ সালে রীনা দত্তের সঙ্গে আমিরের ১৬ বছরের দাম্পত্য সম্পর্ক ভাঙন ধরে। এই ভাঙনে দায়ী কোনোভাবে কিরণ ছিলেননা কারণ তখন তাঁরা খুব ভালো বন্ধু ছিলেন। কারণ এক সাক্ষাৎকারে আমির নিজেই জানিয়েছিলেন,রীনা দত্তের সঙ্গে বিবাহ-বিচ্ছেদের পরে তিনি অনেক ডিপ্রেশনে ভুগেছিলেন। ঠিক তখনই নাকি রাতের বেলা একটা ফোন কল আসে যা অভিনেতার কাছে ছিল ঈশ্বরের মতো। হ্যাঁ এই ফোন কল ছিল কিরণের। টানা আট ঘণ্টা কিরণের সঙ্গে ফোনে কথা বলে কিছুটা স্বস্তি বোধ করেন আমির।
তারপরই সেই রাতে স্থির করে ফেলেন দুজন দুজনের সাথে একসাথে থাকবেন। তারপরই দুজন প্রথমে লিভ ইনে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। টানা ৩ বছর লিভ-ইন রিলেশনশিপে একে অপরকে ভালো করে চিনে নিয়ে ২০০৫ সালে ২৮ শে ডিসেম্বর কিরণ রাওয়ের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হন অভিনেতা। বিয়ের ৬ বছরের মাথাতে ২০১১ সালে ২৫ শে নভেম্বর আমির-কিরণ রাওয়ের জীবনে আসে তাঁদের সন্তান আজাদ খান। সারোগেসির মাধ্যমে জন্ম হয় আজাদের। ছেলেকে নিয়ে দিব্যি চলছিল সুখের সংসার।
প্রসঙ্গত, আমির খানের স্ত্রী কিরণ রাও-এর জন্ম বেঙ্গালুরুতে। হায়দরাবাদের রাজ পরিবারের মেয়ে ছিলেন কিরণ। তবে কিরণের ছোটবেলা কেটেছে কলকাতা শহরে। এখানে নিজের স্কুল জীবনের পড়াশোনা শেষ করেন। পরবর্তীকালে মা-বাবার সঙ্গে কলকাতা ছেড়ে মুম্বই চলে যান কিরণ। মুম্বইতে কলেজ আর কাজ শুরু করেন। কিরণ বরাবর
পরিচালক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন কিরণ।
এরপর আমিরের প্রথমা স্ত্রী রীনার সাথে সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন কিরণ। প্রথমদিকে বিভিন্ন ছবিতে বিভিন্ন পরিচালকের সাথে সহকারী পরিচালক হিসাবে কাজ করছিলেন কিরণ। সেখান থেকেই ‘লগান’ ছবিতে কাজ করার সুযোগ আসে। এরপর একাধিক সিনেমা পরিচালনা করেন। কিরণ পরিচালিত একমাত্র ছবি ‘ধোবি ঘাট’-এ অভিনয়ও করেছেন আমির। দুজনে নিজেদের বিবৃতিতে জানিয়েছেন, নিজেদের দাম্পত্য সম্পর্কে ইতি টানলেও কাজের জায়গাতে ইতি টানেননি। যৌথ ভাবে পানি ফাউন্ডেশনসহ বাকি সকল প্রজেক্টে একসঙ্গেই কাজ করবেন আমির-কিরণ।