শ্রেয়া চ্যাটার্জি- রবিবার হলেই মনটা কেমন মাংস মাংস করে। যদিও লকডাউন এর দৌলতে কার্যত আমাদের প্রতিদিন গুলোই রবিবার মতনই কাটছে। তাহলেও রবিবারের একটা আলাদা মাহাত্ম্য আছে, সকালে লুচি, তরকারির পরে দুপুরে মধ্যাহ্ন ভোজের মাংস না থাকলে যেন বাঙালির ভুরিভোজটা একেবারে অসম্পূর্ণ থেকে যায়। অনেকেই শারীরিক কারণে খাসির মাংস খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন, ভালোবেসে কাছে টেনে নিয়েছেন মুরগির মাংসকে। সহজে হজম হয়, খেতেও ভালো লাগে। তবে রোজ রোজ কি আর মুরগির সেই পাতলা ঝোল ভালো লাগে?
বিশেষ করে মুরগির এই খাবারের পাশাপাশি যদি থাকে পোলাও, ফ্রাইড রাইস কিংবা রাতের খাবারের জন্য লুচি বা পরোটা তাহলে তো পাতলা জলের মতো আলু দিয়ে মুরগির মাংসের ঝোল একেবারে বেমানান। তাই মুখের স্বাদ পাল্টাতে আজকে আমাদের রেসিপি ‘আচারি চিকেন’। আচার খেতে ভালোবাসেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বড় কঠিন। সব সময় খেতে বসার সময় আচারের শিষির কথা মাঝে মাঝে মনে থাকেনা, খাওয়া শেষ হয়ে গেলে তারপরে মনে হয় ইস একটু যদি আচার পাওয়া যেত। তাই এমন ভুলটা যাতে আর না হয়, তার জন্য চিকেনের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া যেতে পারে আচারকে।
তবে আচার খাওয়ার ইতিহাস কিন্তু অনেক পুরনো। শোনা যায়, রানী ক্লিওপেট্রা নাকি আচার খেতে খুব ভালোবাসতেন। আর তিনি বিশ্বাস করতেন, আচার তার সৌন্দর্য রক্ষায় সাহায্য করে। টক, মিষ্টি, ঝাল, মশলাদার নানান রকম স্বাদে আচারের জনপ্রিয়তা আজও অব্যাহত। ধারণা করা হয়, এই খাবারটির উদ্ভব ভারতীয় উপমহাদেশে। তবে আজ থেকে প্রায় ২৪০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে প্রাচীন মেসোপটেমিয়া সভ্যতার সময় থেকে মানুষ আচার খাবার শুরু করেছে, এমনটাই ইতিহাস বলছে। লেবু, আমড়া, জলপাই, আমলকি, আম, তেঁতুল, কুল, চালতা, আনারস ইত্যাদির আচার এর পাশাপাশি বিভিন্ন সবজি দিয়ে আচার বানানোর রীতি প্রচলিত আছে যেমন পেঁয়াজ, রসুন, বেগুন, টমেটো, গাজর, শসা, বাঁধাকপি, লংকা ইত্যাদি। সবজি দিয়ে যদি আচার বানানো যেতে পারে তাহলে চিকেন দিয়ে কেন আচার বানানো যেতে পারে না? এমন প্রশ্ন মাথায় আসতেই পারে। তাই সহজেই খুব কম উপকরণে বানিয়ে ফেলুন ‘আচারি চিকেন’।
উপকরণঃ মুরগির মাংস, পেঁয়াজ বাটা, রসুন বাটা, আদা বাটা, টমেটো বাটা নুন, চিনি স্বাদমতো, হলুদ গুঁড়ো, আমচুর পাউডার, টক দই, সরষে তেল, বড় টেবিল চামচের ১-২ চামচ আমের আচারের কাথ্ব।
প্রণালীঃ মুরগীর মাংসের টুকরো গুলিকে ভালো করে ধুয়ে টক দই দিয়ে মাখিয়ে রাখতে হবে। কড়াইতে সরষের তেল গরম হলে, একে একে পেঁয়াজ বাটা, রসুন বাটা, টমেটো বাটা দিয়ে লাল লাল করে ভাজতে হবে। ভাজার সময় অল্প একটু চিনি দিতে হবে। তারপর টক দই দিয়ে ম্যারিনেট করা মাংস দিয়ে দিতে হবে। আদাবাটা যোগ করতে হবে। বেশ ভালো করে পেঁয়াজ, রসুন এর সঙ্গে ভাজতে হবে। সামান্য হলুদ গুঁড়ো দিতে হবে। স্বাদ মতো নুন দিয়ে ভাল করে কষাতে হবে। ভালো করে ভাজা ভাজা হয়ে গেলে অল্প একটু জল দিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে। কিছুক্ষণ পর ঢাকনা খুলে, আমচুর পাউডার এবং আমের আচারের কাথ্ব ১-২ চামচ দিয়ে দিতে হবে। ভাল করে মিশিয়ে দিয়ে কয়েকটা কাঁচা লঙ্কা চিরে দিয়ে দিতে হবে। হালকা হাতে একটু নাড়াচাড়া করে নিয়ে নামিয়ে, গরম গরম পোলাও, ফ্রাইড রাইস কিংবা লুচি, পরোটার সঙ্গে পরিবেশন করুন ‘আচারি চিকেন’।