শ্রেয়া চ্যাটার্জি – ৫০ বছর পরে অবশেষে মুক্তি পেল হাতি। উত্তর প্রদেশের আগ্রায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করত সে। কঠিন রাস্তায় ভিক্ষা করতে করতে এসে হয়ে পড়েছিল ক্লান্ত এবং আহত। দীর্ঘদিনের অত্যাচারের ফলে তার পায়ের ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু তার জীবন একেবারে বদলে গেল ২০১২ সালের পর। যখন উত্তরপ্রদেশের ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট এন্ড ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন এনজিও ওয়াইল্ড লাইফ এস ও এস তাকে উদ্ধার করে। তার নাম ফুলকলি। যখনই সংস্থাটি তাকে উদ্ধার করেছিল সে যথেষ্ট দুর্বল ছিল, খাদ্যাভাবে ভুগছিল এবং তার শরীরের মধ্যে স্পষ্ট ছিল অযত্নের ছাপ। কিন্তু আজ সে ভীষণ খুশি। একটা সুস্থ সবল হাতি।
প্রথমেই তাকে উদ্ধার করে তার পায়ের আঘাত সারানো হয়। এক বছর সময় লেগেছিল ফুলকলির শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠতে। কিন্তু আজ সে একেবারে সুস্থ, সবচেয়ে লম্বা নারী হাতি। তার ওজন ৪৫০০ কিলোগ্রাম। পশু চিকিৎসক ইয়াদুরাজ খাদপেকার জানান, “বছরের পর বছর ধরে অবহেলিত ফুলকলিকে প্রতিনিয়ত চিকিৎসার মধ্যে রাখা হয়েছিল। যার ফলে সে এখন একেবারে সুস্থ। সুস্বাদু সুষম আহার দেওয়া হয় ফুলকলিকে”। যখন তাকে পাওয়া গিয়েছিল, তখন সে ভীষণ ক্লান্ত এবং ভয়ার্ত হয়েছিল। কিন্তু যত্নে সে আবার আগের মতন শক্তি ফিরে পেয়েছে। আজ ৬৩ বছরের এই পশুটি একেবারে অন্য জীবন যাপন করছে। যমুনা নদীর ধার ঘেঁষে যে রাস্তা চলে গেছে, সেখানে সে রীতিমতো মজা করে হাঁটাচলা করে। মায়া নামে আরেক হাতির সঙ্গে নদীতে জল ছুঁড়ে ছুঁড়ে স্নান করে।
হাতিরা মূলত কষ্ট সহ্য করতে পারে তারা মাইলের পর মাইল হেঁটে যায়। কিন্তু ফুলকলি বা মায়ার মতন হাতি যারা এই সমস্ত সংস্থায় থাকে, মানুষের আদর যত্নে বেড়ে ওঠে, তাদের পক্ষে আর কখনোই সম্ভব না আবার কোন অরণ্যে গিয়ে কঠোর কঠিন জীবন যাপন করা। কারণ এরা প্রতিদিন জীবনযাপনের জন্য মানুষের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এই সংস্থার হাতিরা প্রতিদিন যমুনা নদীর ধারে বেড়াতে যায়, কাটিয়ে আসে অনেকটা সময়। তবে বনদফতরের এই কর্মকাণ্ডকে সাধুবাদ জানাতে হয়। আজকের তাদের উদ্যোগেই ফুলকলি ফিরে পেল নতুন জীবন। তবে ফুলকলির মতন কত হাতি, তাদের উদ্যোগে এর আগেও হয়তো ফিরে পেয়েছে নতুন জীবন। আদর-যত্নে তারা এক আহত, অবলা জীবকে ভালোবেসে মানসিক, শারীরিকভাবে সুস্থ করে তুলেছেন।