বিহারের ফলে উল্লসিত হয়ে এবারে অল ইন্ডিয়া মজলিসে ইত্তেহাদুল মুসলিমিন বা এআইএমআইএম এর পরবর্তী লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গ। এদিন এআইএমআইএম প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসি স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, তারা বাংলার বেশ কয়েকটি আসনে লড়তে চলেছেন। আর এই ঘোষণার পরেই বাংলা রাজনৈতিক মহলে নতুন করে সমীকরণ এর সূত্রপাত। এআইএমআইএম যদি লড়তে আসে তাহলে মুসলিম ভোটব্যাংকে বেশ বড় একটি আঘাত পড়বে। বিহারের মুসলিম ভোটব্যাংকে আঘাত করে তেজস্বী যাদব এর দলকে বিশাল বড় ধাক্কা দিয়েছিল এআইএমআইএম। এবারে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোট ব্যাংকের একই অবস্থা হবে না তো? এই নিয়ে বর্তমানে চিন্তায় রয়েছে শাসক দল। তবে, জানা যাচ্ছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জোট গড়ার জন্য প্রস্তুত এমআইএম। আর এই জোট নিয়ে বর্তমানে বেশ সরগরম রাজ্য রাজনীতি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, তৃণমূলের সঙ্গে প্রাক নির্বাচনী জোট গড়ার বার্তা দিতে চলেছে আসাদউদ্দিন ওয়াইসির এআইএমআইএম। মিম আগেই জানিয়ে দিয়েছে, তারা সরাসরি বিজেপি বিরোধী। তাই ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রীকে সহায়তা করতে উদ্যোগী এআইএমআইএম। তাদের লক্ষ্য মূলত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত উত্তরবঙ্গ। বর্তমানে মিম উত্তরবঙ্গের তিন জেলাকে পাখির চোখ করেছে। মালদা, মুর্শিদাবাদ এবং উত্তর দিনাজপুরে এবছর প্রার্থী দিতে চলেছে এআইএমআইএম।
কিন্তু এআইএমআইএম রাজি থাকলেও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে এখনো পর্যন্ত সবুজসংকেত মেলেনি। রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, মিম জোটের প্রস্তাব দিলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাতে রাজি নাও হতে পারেন। তার নেপথ্যে বেশকিছু কারণ খাড়া করেছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। প্রথমত, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের আলাদা জনপ্রিয়তা রয়েছে। যদি এআইএমআইএম কে আসন ছাড়া হয় তাহলে সেই জনপ্রিয়তা হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে। দ্বিতীয়ত, ইতিমধ্যেই তিনি এআইএমআইএম এর বিরুদ্ধে সুর চড়াতে শুরু করেছেন। বহিরাগতরা পশ্চিমবঙ্গে এসে গুন্ডামি করছে বলে তিনি নাম না করে মিমকে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন। তৃণমূল নেতারাও এআইএমআইএমকে বিজেপির এজেন্ট বলে দাবি করা শুরু করে দিয়েছেন।
তবে উত্তরবঙ্গে বিজেপির জনপ্রিয়তা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এই কারণে রাজনৈতিক মহলের অন্য একাংশের মতামত, বিজেপির এই জনপ্রিয়তা রুখতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ পর্যন্ত এমআইএম এর সঙ্গে জোট করতে রাজি হয়ে যেতেও পারেন। তারা বলছেন, এবারে উত্তরবঙ্গে বেশ কিছু আসন লাভ করতে চলেছে বিজেপি। বঙ্গের ভারপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা অমিত মালব্য ইতিমধ্যেই টুইট করে ঘোষণা করেছেন, উত্তরবঙ্গে এবছর গেরুয়া ঝড় উঠতে চলেছে। তাই, এই তিন রাজ্যে যদি এআইএমআইএম কে আসন ছাড়া যায় তাহলে হয়তো কয়েকটি আসন তারা লাভ করলেও করতে পারে।
তবে শুধুমাত্র বিজেপি এবং তৃণমূল নয়, রাজ্যে আসাদউদ্দিন ওয়াইসির দলের আগমনের ফলে চাপে রয়েছে বাম – কংগ্রেস জোটও। মালদা, মুর্শিদাবাদ এবং উত্তর দিনাজপুর কে পাখির চোখ করে এগোচ্ছেন ওয়াইসি। এই জেলাগুলিতে কংগ্রেসের প্রভাব বেশ ভালো। গত ২০১৬ নির্বাচনে এই তিনটি জেলাতে বাম কংগ্রেস জোট ৭৬টি আসনের মধ্যে ৩৪টি জয়লাভ করতে পেরেছিল। কিন্তু, এবারে যদি এআইএমআইএম আসে তাহলে কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্কে বেশ বড় একটা ধাক্কা পড়তে পারে। তাই এআইএমআইএম কে ঢাকাতে ইতিমধ্যেই নিজেদের মধ্যে কৌশল তৈরি করতে শুরু করেছে বাম কংগ্রেস জোট।
এদিকে বিহারের নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর, আসাদুদ্দিন ওয়াইসিকে কংগ্রেস দলনেতা অধীর চৌধুরী বিজেপির ‘ভোট কাটার’ বলে কটাক্ষ করেছেন। এহেন পরিস্থিতিতে আসাদুদ্দিন ওয়াইসি যে, বাংলার রাজনীতিতে একটি মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করতে পারেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।