২০১১ সালের ২ সেপ্টেম্বর আর্জেন্তিনার কোচ হিসেবে অভিষেক হয়েছিল তাঁর। ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে নিজের অভিষেক ম্যাচটা খেলেছিলেন কলকাতার যুবভারতী স্টেডিয়ামে। সেই আলেজান্দ্রো সাবেয়া মারা গেলেন মঙ্গলবার গভীর রাতে। বয়স হয়েছিল মাত্র ৬৬। কোচিং কেরিয়ারে সাবেয়ার সবচেয়ে বড় সাফল্য ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপে আর্জেন্তিনাকে ফাইনালে তোলা। কিন্তু জার্মানির কাছে এক্সট্রা টাইমের গোলে হেরে যান লিও মেসিরা।
বেশ কিছু দিন ধরেই ভুগছিলেন ক্যান্সারে। হার্টেরও সমস্যা ছিল।সপ্তাহ দুয়েক আগে বুয়েনস আইরেসের আইসিবিএ ক্লিনিকে ভর্তি করতে হয়েছিল তাঁকে। তাতেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। মঙ্গলবার রাতে শেষ হয়ে গেল তাঁর সব লড়াই। কয়েক দিন আগেই সারা বিশ্ব ডুবে গিয়েছিল শোকে, দিয়েগো মারাদোনার প্রয়াণে। তাঁরই এক সময়ের টিমমেট এ বার চলে গেলেন। ১৯৮০ সালে আর্জেন্তিনার হয়ে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন মারাদোনা-সাবেয়া।
১৯৭০ সালে আর্জেন্তিনার নামী দল রিভার প্লেটের জুনিয়র দল থেকে উত্থান সাবেয়ার। মূলত খেলতেন উইঙ্গার হিসেবে। দারুণ গতি, নিখুঁত পাসের জন্য জনপ্রিয় ছিলেন। যে কারণে দ্রুত জায়গা পেয়ে যান সিনিয়র টিমেও। রিভার প্লেট থেকে ১৯৭৮ সালে শেফিল্ড ইউনাইটেডে সই করেন। সাবেয়াই ছিলেন প্রথম লাতিন ফুটবলার, যিনি ইংলিশ লিগ খেলেন। সেখান থেকে লিডস ইউনাইটেডেও খেলেছেন দুটো মরসুম। কার্লোস বিলার্দোর কোচিংয়ে ১৯৮৩ সালে জাতীয় টিমে খেলার সুযোগ পান। তবে দেশের হয়ে ৮টা মাত্র ম্যাচ খেলেছেন সাবেয়া।
ফুটবলার হিসেবে দারুণ সাফল্য না পাওয়া সাবেয়া দ্রুত কোচিংয়ে চলে এসেছিলেন। ১৯৭৮ সালে আর্জেন্তিনাকে বিশ্বকাপ দেওয়া দানিয়েল পাসারেলার সহকারী হিসেবেই কোচিং করিয়েছেন বেশি। আর্জেন্তিনা থেকে উরুগুয়ের জাতীয় টিমের কোচিং করিয়েছেন ওই জুটি। ইতালির পার্মা, ব্রাজিলের কোরিন্থিয়ান্স, মেক্সিকোর মন্তেরিতেও কোচিং করিয়েছেন তাঁরা।
পাসারেলার ছায়া থেকে বেরিয়ে এসে ২০০৯ সাল থেকে ক্লাব কোচিং শুরু করেন সাবেয়া। লা প্লাটার হয়ে ওই বছরই কোপা লিব্রেতাবোরেস জেতেন। ২০১১ সালে কোপা আমেরিকায় খারাপ ফল করা আর্জেন্তিনার কোচ নিয়োগ করা হয় তাঁকে। কোচ হয়েই লিওনেল মেসিকে দলের ক্যাপ্টেন ঘোষণা করেন সাবেয়া।
প্রিয় কোচ মারা যাওয়ার পর মেসি তাঁর সঙ্গে ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘কোচের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো অসাধারণ। আমি ভাগ্যবান। আলেজান্দ্রো অসাধারণ মানুষ ছিলেন। পেশাদারও। উনি আমার কেরিয়ারটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অনেকটা সাহায্য করেছেন। ওঁর কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার সুযোগও পেয়েছি। ওঁর কোচিংয়ে ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে সেরা কিছু মুহূর্তের মুখোমুখি হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। ওঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা রইল।’
সাবেয়ার সঙ্গে রিভার প্লেটে খেলা সতীর্থ উবালদো ফিলোল বলেছেন, ‘২০২০ সালের ফুটবলে আরও একটা খারাপ খবর, সাবেয়া আর নেই। দারুণ একজন প্লেয়ার অত্যন্ত সফল একজন কোচ, যে আমাদের ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। এ সবের বাইরে ছিল অসাধারণ মানুষ। বন্ধু, তোমাকে মিস করব।’