টিভির পর্দায় নায়ক দের শরীর দেখে আপনার কি চোখ জলজল করে ওঠে? মনে মনে ভাবেন এমন একটা মানুষ যদি আমার জীবনে আসতো কতই না ভালো হতো। হৃত্বিক রোশন, সালমান খান, আমির খান, শাহরুখ খান, রনবীর কাপুর কত কেউই আছে আপনার লিস্টে। কিংবা রাস্তাঘাটেও সুন্দর দেখতে, সুন্দর চেহারার ছেলে দেখে একবার উঁকি মেরে দেখেন নাকি!
এই গল্পটা শুধু আপনার নয় এই গল্পটা আমার আপনার মতো প্রতিটি সাধারণ ঘরের মেয়ের নিত্যনৈমিত্তিক গল্প। রাস্তাঘাটে যাওয়ার সময় সুন্দর ছেলে দেখলে একবার উঁকি মেরে বা পিছন ফিরে তাকাতে সকল মেয়েদের ইচ্ছা করে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সমস্ত সুপারহিরোদের জায়গা নিয়েছেন সত্তিকারের সুপারহিরোরা। আসুন এই সুপার হিরোর মধ্যে একজন যার সঙ্গে আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিই। ইনিও একজন খান, তবে না বলিউডের তিন খানের মতন নয়। তার নাম মোহাম্মদ জাভেদ খান।
তথাকথিত গ্ল্যামার এবং শারীরিক গঠনের সৌন্দর্য নেই, কিন্তু ভগবান যে মন বানিয়ে পাঠিয়েছে পৃথিবীতে তা কিন্তু আপনি সহজে পাবেন না। পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন অটো চালানো। উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা যে অটো চালায় না তা বোঝাই যাচ্ছে তাই সে ক্ষেত্রে বলাই বাহুল্য অর্থনৈতিক সংকটের পরিবেশেই ছিলেন এই যুবক। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় তার এক হিরোগিরি বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে। সত্যিই একে আপনি হিরোগিরি বলতেই পারেন। নিজের অটোকে একেবারে পরিবর্তন করে ফেলেছেন অ্যাম্বুলেন্সে।
দেশজুড়ে যখন এম্বুলেন্স অক্সিজেন স্বাস্থ্যব্যবস্থার এমন খারাপ অবস্থা ঠিক সেইসময় এই হিরোর আবির্ভাব হয়েছে। আজ এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে কোন সিনেমার হিরো কে নয় এই সমস্ত সামাজিক হিরো কে স্যালুট জানাই। অটোর মধ্যে ব্যবস্থা রেখেছেন অক্সিজেন সিলিন্ডারের। ফোন অন করে রেখেছেন সারাক্ষণ দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াবেন বলে। ফোন পাওয়া মাত্রই পেশেন্ট এবং তাদের লোকজনকে নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন গন্তব্যস্থলে।
নিশ্চয়ই ভুরু কুঁচকে ভাবছেন এত কাণ্ড যখন করছে তার মানে মোটা টাকা হাঁকাচ্ছে পেশেন্ট পার্টির থেকে। শুনলে অবাক হবেন একদমই তা নয়, এই যুবক একেবারে বিনামূল্যে করে চলেছেন এই কাজটি। দিনরাত এক করে নিজের অটোকে অ্যাম্বুলেন্স তৈরি করে রুটে ডিউটি করা বন্ধ করে দিয়ে বিনা পয়সায় পেশেন্টদের নিয়ে চলে যাচ্ছেন হাসপাতালে হাসপাতালে।
টিভির পর্দা খুলে এই যেমন আপনি একেবারে জবুথবু হয়ে বসে পড়ছেন চারিদিকে পরিস্থিতি দেখে। আপনি ভয়ে শিউরে উঠছেন ভাবছেন আপনার যদি কোন কারণে কোভিড হয় তখন আপনি কোন হাসপাতালে ছোটাছুটি করবেন। হাসপাতালে হাসপাতালে অক্সিজেন নেই, অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যাচ্ছে না, অমানবিকতার ছবির মধ্যে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে এই যুবক। নিজের রুটি-রুজির পরোয়া না করে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন মানুষকে সাহায্য করতে। গোটা সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে তাকে স্যালুট জানাচ্ছে। আমরাও প্রত্যেকে তাকে স্যালুট জানাই, তিনি সুস্থ থাকুক, ভালো থাকুক এই কামনা করি। স্যালুট মোহাম্মদ জাভেদ খান।