পড়াশোনার জন্য শুধু রাত টুকুই পেতেন। তাও সাথ দিত না কেরোসিনের আলো। সারা সকাল মায়ের সাথে চুরি বিক্রি করে রাত্রিবেলা কেরোসিনের আলোয় পড়াশোনা করলেও কিছুক্ষণ পড়ার পর নিভে যেত সেই আলো। তার মধ্যে একটি পা পোলিও আক্রান্ত। কিন্তু তাতেও থেমে থাকেনি রমেশ ঘোলাপ। জীবনে এত কষ্ট করার পরেই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন রমেশ আইএএস অফিসার হয়ে ওঠে। ঝাড়খণ্ডের এনার্জি ডিপার্টমেন্টে জয়েন্ট সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করছে সে।
ছোটবেলা থেকেই সে এবং তার পরিবার নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। বাবা গোড়াখ ঘোলাপ একটি সাইকেলের দোকান চালাতেন। ঘরে এক বেলা খাবার জুটত আর একবেলা খাবার জুটত না। এভাবেই চলছিল বেশ কিছু বছর। এরপর হঠাৎ করেই অতিরিক্ত মদ্যপানের জন্য তার বাবা মারা গেলেন। সংসারে ঝড় নেমে এলো। অভাব কি জিনিস তা আরো ভালো করে বুঝতে পারলেন রমেশ। তবে সমস্ত ঘটনা তাকে তার লক্ষ্য থেকে সরাতে পারেনি। মায়ের সাথে চুরি ফেরি করতে যেতেন তার পঙ্গু পা নিয়ে।
রমেশের পরিবার মহারাষ্ট্রের সোলাপুর জেলায় থাকতো। মাকে সাহায্য করার পাশাপাশি পড়াশোনা সমানভাবে চালিয়ে গেছে রমেশ। ২০০৯ সালে কলাবিদ্যায় স্নাতক হন তিনি। তারপর তিনি শিক্ষকতা শুরু করেন। কিন্তু কলেজে পড়ার সময় থেকেই তার মনে মনে আইএএস হওয়ার ইচ্ছে ছিল।
কিন্তু মনে মনে ইচ্ছে থাকলেও পড়াশোনার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারছিলেন না তিনি। কারণ আইএএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য প্রয়োজন প্রচুর সময় এর। এরপর স্বনির্ভর প্রকল্প থেকে ব্যবসার জন্য একটি ঋণ নেন তার মা। ফলে চাকরি ছেড়ে পুনে গিয়ে পুরোপুরি পড়াশোনার দিকে মনোনিবেশ করেন তিনি। ২০১০ সালে তিনি প্রথমবার পরীক্ষা দিলে উত্তীর্ণ হতে পারেন না কিন্তু থেকে স্কলারশিপ এবং থাকার জন্য হোস্টেল পান। তিনি তার হাত খরচ চালানোর জন্য পোস্টার রং করতেন। এরপর ২০১২ সালে তিনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি মহারাষ্ট্র পাবলিক কমিশন পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। জীবনে এত বাধা পেরিয়ে তিনি তাঁর সাফল্য অর্জন করেছেন শুধুমাত্র নিজের উপর বিশ্বাস এর ওপর জোর রেখেই। তিনি এখন আমাদের সবার কাছে একটি অনুপ্রেরণা।