প্রতিবছর পশ্চিমবঙ্গে মোটামুটি একই রকম চিত্র থাকে বৃষ্টি নিয়ে। যদি একবার বৃষ্টির পরিমাণ রাজ্যে পারে তাহলেই বানভাসি হয়ে যায় দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। আর এবারেও সেই একই রকমভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে দক্ষিণবঙ্গ। যদিও এবারে বৃষ্টির পরিমাণ অন্যবারের থেকে কিছুটা বেশি হতে পারে কিন্তু ক্ষতির পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত। গত দু’বছর বৃষ্টির পরিমাণ একটু কম ছিল, তাই তেমন মাত্রাছাড়া ক্ষতি হয়নি যতটা এইবারে। স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনকে বারংবার জল ছাড়তে হচ্ছে। বানভাসি বহু এলাকা। জলে ডুবে প্রাণ হারিয়েছেন বহু মানুষ। লক্ষ লক্ষ হেক্টর কৃষিজমি জলের তলায়।
নবান্ন সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই এই বন্যা পরিস্থিতির কারণে ২৩ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মারা গিয়েছেন সাতজন জলের তলায় তলিয়ে, ৬ জন মারা গিয়েছেন দেওয়াল ভেঙে, বাজ পড়ে মারা গিয়েছেন ৬ জন। এবং তড়িতাহত হয়ে মারা গেছেন ২ জন। পাশাপাশি ধ্বসে চাপা পরেও দুজন মারা গিয়েছেন বলে খবর। এই পরিস্থিতিতে, রাজ্য সরকার এবং দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন এর মাথায় রীতিমতো বাজ ভেঙে পড়েছে। বাঁধে জল রাখা যাচ্ছে না বলে বারংবার জল ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন।
অন্যদিকে আবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রীতিমতো দায় এড়ানোর জন্য এই বন্যার দায় সম্পূর্ণরূপে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন এর মাথায় ঠেলে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন এই বন্যাটি সম্পূর্ণরূপে মানুষ দ্বারা তৈরি। প্রভুতো ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকেরা। ইতিমধ্যেই বহু কৃষকের জমিতে বীজ তলা, চাষের জমি স্বভাব ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গিয়েছে। শিলাবতী থেকে শুরু করে কংসাবতী এবং দামোদর নদীর জল মাত্রাতিরিক্ত ভাবে বেড়ে গিয়েছে।
দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন আবার নিজেদের মাথায় কোনো দায় রাখতে চাইছে না। তারা সরাসরি বলছে রাজ্য সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। কিন্তু, নদী এবং খালের নাব্যতা ধীরে কমতে শুরু করেছে। এছাড়াও অনেক বাঁধ এমন আছে যেখানে কোন জলাধার নেই, তাই সেখানে সেই সমস্ত বাঁধ থেকে জল ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন। কিন্তু সবশেষে এইটাই বলতে হয়, রাজায় রাজায় যুদ্ধ হচ্ছে, কিন্তু প্রাণ যাচ্ছে উলুখাগড়ার। অর্থাৎ এই বন্যার জন্য কেন্দ্র-রাজ্য, দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন, পুরসভা, এবং সেচ দপ্তরের মধ্যে যতই দড়ি টানাটানি খেলা হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত প্রাণ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।