Business Idea: কম পুঁজি আর অল্প জায়গায় এই ব্যবসা করে লাখ লাখ টাকা করুন আয়, জানুন এভাবে
এখন ভারতে এক ধরনের খামারের ব্যবসা খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে
ভারতের কৃষকরা এখন শুধুমাত্র আর কৃষি থেকে নয় আরো অনেক ক্ষেত্র থেকেই প্রচুর টাকা আয় করতে শুরু করেছেন। শুধুমাত্র নিজের জমি ব্যবহার করে কৃষকরা মাসে মাসে লাখ লাখ টাকা রোজগার করতে পারছেন এখন। বর্তমানে খাবারের ব্যবসা ভারতের একটা বড় ব্যবসা হয়ে উঠেছে। এখনকার দিনে বাজারে মুরগির ডিমের একটা দারুন চাহিদা রয়েছে। মুরগির মাংসের প্রতি মানুষের আসক্তি বাড়ছে। এর ফলে মুরগির খাবার তৈরি করে প্রচুর টাকা লাভ করা যায়। বিড জেলার এক কৃষক কল্যান ঘোরকে এভাবেই মুরগি চাষ করে প্রতি মাসে লক্ষ টাকা করে আয় করেন।
কল্যাণ ঘোড়কের সফলতার গল্প একটি অনুপ্রেরণার উৎস, যা দেখিয়ে দেয় কীভাবে ছোট উদ্যোগ থেকেও বড় সাফল্য অর্জন করা যায়। মাত্র আড়াই একর জমির মালিক হওয়া সত্ত্বেও ঘোড়কে তিন বছর আগে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন। ঐতিহ্যবাহী চাষাবাদের উপর নির্ভর করে সংসার চালানো তার পক্ষে ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ে। সেই সময় তিনি বিকল্প পথ খোঁজার সিদ্ধান্ত নেন এবং শুরু করেন গাভরান মুরগি পালনের ব্যবসা।
পোলট্রি ব্যবসা বেছে নেওয়ার পেছনে ঘোড়কের চিন্তা-ভাবনা ছিল সুপরিকল্পিত। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে কম পুঁজি, কম ঝুঁকি এবং সীমিত জায়গায় এই ব্যবসা গড়ে তোলা সম্ভব। প্রথম দিকে মাত্র ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে তিনি মুরগির জন্য উপযুক্ত অভয়াশ্রম তৈরি করেন। সেখানে প্রাকৃতিক পরিবেশে মুরগি লালন-পালনের ব্যবস্থা করা হয়। মুরগির পুষ্টির কথা মাথায় রেখে স্থানীয় শস্য, ঘাস এবং খামারের বর্জ্য ব্যবহার করে খাবার প্রস্তুত করেন।
ঘোড়কের এই উদ্যোগ ধীরে ধীরে সফলতার দিকে এগিয়ে যায়। গাভরান মুরগির ডিম ও মাংস সবসময় উচ্চমানের হওয়ায় স্থানীয় বাজারে তার চাহিদা ছিল যথেষ্ট। শুরুতে অল্প পরিমাণে বিক্রি করলেও ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করতে তিনি খুব বেশি সময় নেননি। দিনে দিনে ব্যবসা বাড়তে থাকে, আর বর্তমানে এই উদ্যোগ থেকে বছরে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় হচ্ছে। অল্প খরচে ও ছোট আকারে গড়ে ওঠা এই ব্যবসা তার এলাকায় অন্যান্য কৃষকদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে।
তবে এই পথচলা একেবারে মসৃণ ছিল না। পোলট্রি ব্যবসায় মাঝেমধ্যে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। মুরগির রোগ-বালাই, বাজারের ওঠানামা এবং মুরগির স্বাস্থ্য বজায় রাখা ছিল অন্যতম চ্যালেঞ্জ। কিন্তু ঘোড়কে কখনও হাল ছাড়েননি। তিনি নিয়মিত পশু চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়েছেন এবং মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রাকৃতিক উপায় ব্যবহার করেছেন।
কল্যাণ ঘোড়কের অভিজ্ঞতা ছোট কৃষকদের জন্য এক দৃষ্টান্ত। তিনি প্রমাণ করেছেন যে সঠিক পরিকল্পনা, অধ্যবসায় এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে যে কোনো উদ্যোগকে সফল করা যায়। তার মতে, একমাত্র ঐতিহ্যবাহী কৃষির ওপর নির্ভর না করে কৃষকদের উচিত বিকল্প আয়ের উৎস খুঁজে নেওয়া। ছোট বিনিয়োগ এবং সীমিত পরিসরেও একটি ব্যবসা বড় সফলতা এনে দিতে পারে, যদি তাতে নিষ্ঠা ও ধৈর্যের সাথে কাজ করা হয়।
ঘোড়কের এই উদ্যোগ শুধু আর্থিক সাফল্যই এনে দেয়নি, বরং এলাকার অন্য কৃষকদের মধ্যেও আত্মবিশ্বাস জাগিয়েছে। তার এই পথচলা প্রমাণ করে, সংকটের সময় বিকল্প ভাবনা এবং সাহসী পদক্ষেপই মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এটি নতুন প্রজন্মের কৃষকদের জন্য এক নতুন আশা জাগিয়ে তোলে এবং দেখিয়ে দেয়, আধুনিক চাষাবাদ বা পরিপূরক ব্যবসা কৃষির ভবিষ্যৎ রূপ বদলে দিতে পারে।