নয়াদিল্লি: হাথরস কান্ডের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছে গোটা দেশ। বৃহস্পতিবার নির্যাতিতা তরুণীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার পথে কার্যত গ্রেফতার হয়েছেন রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। আর গতকাল শুক্রবার হাথরসে জান তৃণমূলের সাংসদের দলের প্রতিনিধিরা। তাঁরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে জান। দফায় দফায় সেখানে বিক্ষোভ শুরু হয়। জারি 144 ধারা। এমনকি এই একই ধারা জারি করা হয় দিল্লির ইন্ডিয়া গেটের সামনেও। কারণ, সেখানেও জমায়েত করে বিক্ষোভ দেখানো হয়। যদিও জমায়েত করে যাতে কোনওরকম বিক্ষোভ দেখানো না যায়, তার জন্য সক্রিয় থাকে দিল্লি পুলিশ। এমনকি ডেরেক ও’ব্রায়েন ও কাকলি ঘোষদস্তিদারদের কার্যত ধাক্কা মারে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। আর আজ, শনিবার এরই প্রতিবাদে বিকেলে মহানগরের রাজপথে নামেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আজ বিকেল ৪টেয় শুরু হবে মমতার মিছিল। বিড়লা তারামণ্ডলের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু হয় সেখান থেকে মেয়ো রোডের গান্ধীমূর্তি পাদদেশ এসে পদযাত্রা শেষ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পদযাত্রায় শেষে এক সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় তিনি বলেন, করোনা চলাকালীন দীর্ঘ বেশ কয়েক মাসে আমার কিছু পরিচিত লোকজন মারা গিয়েছেন। এই করোনা পরিস্থিতিতে আমার সেই খবর শুনে কষ্ট হয়েছে। কিন্তু এরকম কষ্ট হয়নি। যে রকম কষ্ট এই মেয়েটার জন্য হচ্ছে। এই প্যানডেমিক পরিস্থিতিতে আমরা কোনও মিছিল-মিটিং করিনি। কিন্তু আজ এই পদযাত্রা করতে বাধ্য হলাম। ছোট্ট মেয়েটি আমায় বাধ্য করেছে। মনটা আমার উত্তরপ্রদেশেই পড়ে রয়েছে। তাই প্রতিনিধি দলকে পাঠিয়েছিলাম। যদিও তাঁদের ওপর অত্যাচার করা হয়েছে। তাঁরা তাঁদের প্রাপ্য সম্মানটুকু উত্তরপ্রদেশে পুলিশের তরফ থেকে পায়নি। আমি ওখানে যেতে পারছি না। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আমি ইউপি-র ওই গ্রামে ছুটে যাই। দেশের দলিতরা অত্যাচারিত হচ্ছে। সংখ্যালঘুরা অত্যাচারিত হচ্ছে। আদিবাসীরা অত্যাচারিত হচ্ছে। কেউ ভয়ে মুখ খুলতে পারছে না। দেশে প্যানডেমিক পরিস্থিতি চলছে। কিন্তু সেটা করোনা প্যানডেমিক নয়, সেটা বিজেপি প্যানডেমিক। এই বিজেপি আর চাই না।’ কার্যত এরকম কড়া ভাষায় কেন্দ্রীয় সরকার তথা মোদি সরকারকে একহাত নিলেন মমতা।
এর পাশাপাশি তিনি এও বলেন, ‘আমাকে মুসলিম তোষক বলে কটাক্ষ করা হয়। কিন্তু আমি হিন্দুত্ববাদের নাম করে মানুষের বলি দিই না। আমি সব। আমি হিন্দু, আমি মুসলিম, আমি আদিবাসী, আর আজ আমি দলিত। শুধু এটুকুই এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে কামনা করতে চাই যে, ওই নির্যাতিতা তরুণীর পরিবার যেন ন্যায্য বিচারটুকু পায়। আজ যেটা উত্তরপ্রদেশে একটা মেয়ের সঙ্গে হল, সেটা যে দুদিন পর সারা দেশে ঘটবে না, তার নিশ্চয়তা কে দেবে?’ এভাবেই আবেগতাড়িত হয়ে আজ পদযাত্রা শেষে বক্তৃতা রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। এই পরিস্থিতিতে মমতার এই বক্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।