অফবিটরাজ্য

রংবেরঙের ছবিতে সেজে উঠেছে লোকাল ট্রেন এর কামরা গুলি

Advertisement

শ্রেয়া চ্যাটার্জি : সকালবেলা কোনরকমে ঘুম থেকে উঠে একটু নাকে মুখে গুঁজে এই দৌড় গন্তব্যের দিকে। কেউ যায় অফিসে কেউ যায় স্কুলে, কেউবা তাদের নির্দিষ্ট জায়গায়। বেশিরভাগ নিত্যযাত্রীর জীবনে ট্রেন একটি অপরিহার্য যানবাহন। বাসের মতো অত ঝাকুনি ও সহ্য করতে হয় না, সময়টা বেশ কম লাগে। তাই যে রাস্তায় বাস-ট্রেন দুটোই সহজে পাওয়া যায় সেখানে মানুষ এক বাক্যেই ট্রেন কেই উপযুক্ত যানবাহন বলে গ্রহণ করেন, তার গন্তব্যে যাওয়ার জন্য। ট্রেনের দুলুনিতে তো কেউ কেউ আবার ঘুমিয়ে পড়েন। অফিস যাওয়ার আগে বা ফেরার সময় ঘুমোলে মন্দ হয়না।


কিন্তু এই যে যানবাহনটি আমাদের এত উপকার করে, এত কম সময় আমাদেরকে নিশ্চিন্তে আমাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে, আমরা কি তার একটুও যত্ন নি! নাকি সরকারের সম্পত্তি বলে এটিকে যত্ন নেওয়ার আমাদের কোন দায়িত্ব নেই? তাইতো ট্রেনের মধ্যে কলার খোসা, বিস্কিটের প্যাকেট, ঝালমুড়ির ঠোঙা থেকে শুরু করে পানের পিক, এমনকি ট্রেনের গায়ে লেখা নানান রকমের অশ্লীল ভাষা, কোন কিছুই বাদ যায় না। কিন্তু এটা তো আমাদের সভ্যতা নয়, আমাদের সংস্কৃতি ও এটা নয়। আর আমরা সকলেই যে একই কাজ করে থাকি তেমন নয়, কয়েকজন বিকৃত মনুস্কো মানুষদের জন্যই এমনটা প্রতিনিয়ত সহ্য করতে হচ্ছে আমাদের প্রিয় এই যানবাহন টিকে। সদ্য নতুন রং করা সাজানো কামরাটি কয়েকদিনের মধ্যেই একেবারে নরকের চেহারা নিচ্ছে। কিছু কিছু মানুষ তারা একেবারে নিজের সম্পত্তি ভেবে এর দেওয়ালে লিখতে থাকে নানান রকম অশ্লীল ভাষা, ছড়া-কবিতা। এতে তারা কতটা উপকৃত হন তা জানা নেই, তবে সংস্কৃতি যে একেবারে তলানিতে ঠেকেছে, একথা একেবারে সর্বজনবিদিত।


তবে রোজকার লোকাল ট্রেনের এমন জরাজীর্ণ চেহারা থেকে বেরিয়ে নতুন এক শ্রেণীর কামরার হদিস পাওয়া গেল কৃষ্ণনগর লোকাল এ। এই ট্রেনে হঠাৎ করে উঠলে, আপনি যদি না জেনে উঠে পড়েন তাহলে উঠে ভাববেন আপনি বোধহয় কোন আর্ট গ্যালারিতে ছবি প্রদর্শনী দেখতে গেছেন। হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন, কোন ছবি প্রদর্শনীতে গিয়ে আপনি যেন শিল্পীর আঁকা ছবিতে মুগ্ধ হচ্ছেন বারবার। ট্রেনের কামরা টিকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে তুলির বর্ণময় রঙিন ছবিতে। কখনো হাওড়া ব্রিজ, কখনো কলকাতার ট্রাম, আবার কখনো গ্রাম্য ছবি কখনোবা উঠে এসেছে অয়ার্লি পেইন্টিং। যা দেখে আপনার চোখ জুড়াবে, মন ভরে উঠবে আনন্দে। রোজ যাতায়াতের পথে আপনার ক্লান্তিকে ভুলিয়ে দেবে।


তবে কোন এক দুশ্চিন্তাও আপনাকে ঘিরে ধরতে পারে। যে এই ছবিগুলো বেশিদিন ভালো থাকবে তো? সেই বিকৃত মানুষদের হাত থেকে এই ছবিগুলো কে বাঁচানো যাবে তো? এইসব প্রশ্ন আপনার, আমার মত শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষদের মধ্যে ঘুরপাক খাবেই। এই ভয় কে বুকে করে নিয়ে আপনাকে এই ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে রোজ যাতায়াত করতে হবে,এবং আমরা প্রত্যেকে চাই প্রত্যেকটি ট্রেন যেন এমন নতুন করেই সেজে ওঠে। যার ফলে শিল্পীরা তারাও যেন তাদের কর্মের একটা নতুন পথ খুঁজে পায়, এবং নিজেকে বিকশিত করার সুযোগ পায়। কে বলতে পারে তাদের এমন সুন্দর ছবি সমাজের সমস্ত বিকৃত মানুষকে হয়তো কিছুটা ঠিক করবে। একবার পানের পিক ফেলতে গেলে তাদেরও হয়তো কোথাও বুকের ভেতর থেকে কেউ বলে উঠবে যে এটা করা ঠিক নয়।

Related Articles

Back to top button